গত ১৮ মার্চ, দুই মাসের যুদ্ধবিরতি ভেঙে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় ফের হামলা শুরু করলে সহিংসতা বৃদ্ধি পায়। এতে বহু ফিলিস্তিনি নিহত ও আহত হন এবং মানবিক পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটে। গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে বাংলাদেশের বিভিন্ন সংগঠন সংহতি জানিয়ে নানা কর্মসূচি পালন করছে। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরও ৭ থেকে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি পালন করে।
এই প্রেক্ষাপটে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ‘ইসলামী ছাত্রশিবিরের মাত্র ১ সপ্তাহে গাজা (ফিলিস্তিন) স্বাধীন করার সক্ষমতা রয়েছে’ শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন: এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
শিবির সভাপতি এই মন্তব্য করেছেন দাবিতে জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাকের লোগো সম্বলিত একটি ফটোকার্ডও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়াতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন: এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা গেছে, “‘ইসলামী ছাত্রশিবিরের মাত্র ১ সপ্তাহে গাজা (ফিলিস্তিন) স্বাধীন করার সক্ষমতা রয়েছে” শীর্ষক মন্তব্যটি ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম করেননি। প্রকৃতপক্ষে, কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়া এবং দৈনিক ইত্তেফাকের একটি ভিন্ন ফটোকার্ড সম্পাদনা করে এই মন্তব্যটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার নামে প্রচার করা হয়েছে।
উক্ত মন্তব্যের সত্যতা যাচাইয়ে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি জাহিদুল ইসলামের ফেসবুক পেজসহ তার অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রোফাইল পর্যালোচনা করা হয়েছে। তবে সেখানে আলোচিত মন্তব্যের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
একই দাবিতে ছড়িয়ে পড়া ফটোকার্ডটি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এতে দৈনিক ইত্তেফাকের লোগো থাকলেও প্রকাশের তারিখ উল্লেখ নেই।
দৈনিক ইত্তেফাকের লোগোর সূত্র ধরে গণমাধ্যমটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত ফটোকার্ডগুলো পর্যালোচনা করে আলোচিত দাবি সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড পাওয়া যায়নি। এছাড়া, তাদের ওয়েবসাইট ও ইউটিউব চ্যানেলেও এ ধরনের কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ডের অস্তিত্ব মেলেনি।
তবে গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর দৈনিক ইত্তেফাকের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের কার্যক্রম থাকবে না, এটা কীভাবে সম্ভব’ শীর্ষক ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি জাহিদুল ইসলামের মন্তব্য সম্বলিত একটি ফটোকার্ড পাওয়া যায়। ফটোকার্ডটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত দাবিতে ছড়িয়ে পড়া ফটোকার্ডটির সঙ্গে এর ডিজাইন ও ব্যবহৃত ছবির মিল রয়েছে।

অর্থাৎ, ইত্তেফাকের ওই ফটোকার্ড ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করেই আলোচিত ভুয়া ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
পাশাপাশি, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতির উক্ত মন্তব্যের কোনো সূত্র বা প্রমাণ অন্য কোনো গণমাধ্যমেও পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক হোসাইন আহমাদ জুবায়ের রিউমর স্ক্যানারকে জানান, শিবিরের কেন্দ্রীয় সোশ্যাল মিডিয়া বিভাগ নিশ্চিত করেছে যে, কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম এ ধরনের কোনো মন্তব্য কোথাও দেননি এবং লিখেননি।
একই বিষয়ে ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক আজীজুর রহমান আজাদ জানান, কেন্দ্রীয় সভাপতির সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি এ ধরনের কোনো বক্তব্য, পোস্ট বা মেসেজ কাউকে দেননি। যারা এই গুজব ছড়াচ্ছে, তারা মূলত শিবিরের ফিলিস্তিন বিষয়ক সাত দিনের কর্মসূচিকে ব্যঙ্গ করছে।
সুতরাং, “ইসলামী ছাত্রশিবিরের মাত্র ১ সপ্তাহে গাজা (ফিলিস্তিন) স্বাধীন করার সক্ষমতা রয়েছে” শীর্ষক মন্তব্যটি শিবির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম করেছেন বলে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া দাবিটি মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Rumor Scanner’s analysis.
- Daily Ittefaq: Facebook Post