সম্প্রতি, “তারেক রহমান ও পিনাকী ভট্টাচার্যকে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র” শীর্ষক শিরোনামে মূলধারার টেলিভিশন চ্যানেল এস এ টিভি’র ফটোকার্ডের ডিজাইন সম্বলিত একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও অনলাইন এক্টিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্যকে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষক দাবিতে এস এ টিভি কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
ফটোকার্ড যাচাই
অনুসন্ধানের শুরুতেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ফটোকার্ডটিতে এস এ টিভি’র লোগোর উপস্থিতির সূত্র ধরে এস এ টিভি’র ফেসবুক পেজে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম। কিন্তু, এস এ টিভি’র ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে অনুসন্ধান চালিয়ে উক্ত শিরোনামের কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে, এস এ টিভি’র ফেসবুক পেজ থেকে প্রচারিত ফটোকার্ডের সাথে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত আলোচিত ফটোকার্ডের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে কিছু অসঙ্গতি খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
এস এ টিভি’র প্রচলিত ফটোকার্ডের উপরের অংশে প্রকাশের তারিখ লেখা থাকলেও আলোচিত ফটোকার্ডটিতে প্রকাশের তারিখ লেখা নেই।পাশাপাশি, এস এ টিভি’র প্রচলিত ফটোকার্ডের ফন্টের সাথে সোস্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত ফটোকার্ডের ফন্টের ভিন্নতা খুঁজে পাওয়া যায়। এছাড়া এস এ টিভি’র ফেসবুক পেজে প্রচারিত সাদা বেকগ্রাউন্ড এর ফটোকার্ডগুলোর শিরোনাের ফন্ট কালার লাল হলেও আলোচিত ফটোকার্ডটির শিরোনামের ফন্ট কালার কালো।
অর্থাৎ, উপরোক্ত তথ্য থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে এস এ টিভি’র ফেসবুক পেজের ফটোকার্ড এডিট করেই আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
তথ্য যাচাই
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও অনলাইন এক্টিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্যকে যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কিনা এ বিষয়ের সত্যতা যাচাইয়ে কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে দৈনিক যুগান্তরে গত ২৪ সেপ্টেম্বর “যে কারণে ভিসা নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্তদের নাম প্রকাশ করে না যুক্তরাষ্ট্র” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গণতন্ত্র ও নির্বাচনি প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর আনুষ্ঠানিক ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ওয়াশিংটন। শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। তবে কোনো ব্যক্তির নাম প্রকাশ করেনি যুক্তরাষ্ট্র।
কেন ভিসা নিষেধাজ্ঞা ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করা হয় না- এ বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু বলেন, ভিসানীতির আওতায় ভিসা নিষেধাজ্ঞা যাদের দেওয়া হবে, তাদের নাম প্রকাশ করা হয় না। কারণ কাউকে ভিসা না দেওয়াসহ যে কোনো ভিসা রেকর্ড মার্কিন আইন অনুযায়ী গোপনীয় তথ্য।
তিনি আরও বলেন, সাক্ষ্যপ্রমাণ ভালোভাবে পর্যালোচনা করার পর আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
অর্থাৎ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতিতে নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্তদের নাম প্রকাশ করে না।
মূলত, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার গত ২২ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই মূলধারার গণমাধ্যম এস এ টিভি’র একটি ফটোকার্ড নকল করে “তারেক রহমান ও পিনাকী ভট্টাচার্যকে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র” শীর্ষক ভুয়া দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি প্রথম আলো’র ফটোকার্ড নকল করে তারেক রহমান ও পিনাকী ভট্টাচার্যকে যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দাবিতে দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নামে ভুয়া মন্তব্য প্রচার করা হলে সে বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, এস এ টিভিকে উদ্ধৃত করে “তারেক রহমান ও পিনাকী ভট্টাচার্যকে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র” শীর্ষক দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা এবং উক্ত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডটি এডিটেড বা বিকৃত।
তথ্যসূত্র
- Facebook Page: SA TV
- Jugantor: যে কারণে ভিসা নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্তদের নাম প্রকাশ করে না যুক্তরাষ্ট্র
- State.gov: Press Release