যমুনা টিভির ফটোকার্ড নকল করে ভারতে ধর্ষণ চেষ্টার বানোয়াট তথ্য প্রচার

সম্প্রতি, “মুসলিম নারীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্ষণের চেষ্টা করায় গোপণাঙ্গ হারালেন ভারতের সনাতন ধর্মের এক যুবক” শীর্ষক একটি তথ্য সম্বলিত ফটোকার্ড দেশের বেসরকারি ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম যমুনা টিভি প্রকাশ করেছে দাবিতে অসংখ্য পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়তে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার।  

যমুনা টিভি সম্পর্কিত আলোচিত দাবির ফেসবুক পোস্টগুলো দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, যমুনা টিভি “মুসলিম নারীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্ষণের চেষ্টা করায় গোপণাঙ্গ হারালেন ভারতের সনাতন ধর্মের এক যুবক” শীর্ষক দাবিতে কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি। এমনকি সম্প্রতি এ সংক্রান্ত কোনো সংবাদ অন্য কোনো গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়নি। প্রকৃতপক্ষে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে যমুনা টিভির ফটোকার্ড নকল করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ড যে গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে তাদের অর্থাৎ যমুনা টিভির ফেসবুক পেজে এ সংক্রান্ত কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করা হয়েছে তা খুঁজে দেখার সিদ্ধান্ত নেয় রিউমর স্ক্যানার। যমুনা টিভির কথিত এই ফটোকার্ড পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এতে ফটোকার্ডগুলো প্রকাশের তারিখ গত ২৩ এপ্রিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই সূত্র ধরে যমুনা টিভি’র ফেসবুক পেজ এবং ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করে এ সংক্রান্ত কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদের অস্তিত্ব মেলেনি।

এছাড়াও, আলোচিত ফটোকার্ডের সাথে যমুনা টিভির প্রচলিত ফটোকার্ডের বেশকিছু অমিল খুঁজে পাওয়া যায়। আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে যমুনা টিভির প্রচলিত ফটোকার্ডের সাথে আলোচিত ফটোকার্ডের ফন্ট, ফন্ট সাইজ ও ফন্টের কালার গ্রেডিং ও ফটোকার্ডে প্রদর্শিত ছবির অবস্থানে অমিল পরিলক্ষিত হয়। এছাড়াও ফটোকার্ডের ছবির নিচে ডানদিকে গণমাধ্যমের লোগো এবং একদম নিচে ইন্ট্রো বারটি ঝাপসা দেখা যাচ্ছে, যা যমুনা টিভির প্রচলিত ফটোকার্ডে থাকে না। যমুনা টিভির আসল ফটোকার্ডে একটি জলছাপ দেখা যায়, যা উক্ত দাবিকৃত ফটোকার্ডে নেই। 

Photocard Comparison: Rumor Scanner

পাশাপাশি গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত ফটোকার্ডে ব্যবহৃত ছবিটি ২০২০ সালের মালয়েশিয়া প্রবাসী অসুস্থ বকুলের পরিবারের আকুতি শীর্ষক শিরোনামের ঘটনায় ব্যবহৃত ছবি। এ নিয়ে সেসময় বাংলা টেলিগ্রাফ, Daily Observer, প্রবাসীর দিগন্ত প্রভৃতি সংবাদ মাধ্যমগুলো প্রতিবেদন প্রকাশ করে। 

যা থেকে স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে, যমুনা টিভির লোগো সম্বলিত আলোচিত ফটোকার্ডটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্যে সম্পাদনা করে তৈরি করা হয়েছে।

এছাড়াও  ঘটনাটি আসামে ঘটেছে বলে উক্ত ফটোকার্ডে দাবি করা হয়। তবে সম্প্রতি আসামে এরকম কোনো ঘটনা ঘটেছে বলে দেশীয় বা ভারতীয় কোনো গণমাধ্যম থেকে সংবাদ প্রকাশিত হয় নি। 

মূলত, সম্প্রতি “মুসলিম নারীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্ষণের চেষ্টা করায় গোপণাঙ্গ হারালেন ভারতের সনাতন ধর্মের এক যুবক” শীর্ষক দাবিতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল যমুনা টিভি’র ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, যমুনা টিভি এমন কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি। প্রকৃতপক্ষে, গণমাধ্যমটির ফেসবুক   পেজ থেকে ফটোকার্ড সংগ্রহ করে তা ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে আলোচিত দাবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। 

সুতরাং, “মুসলিম নারীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্ষণের চেষ্টা করায় গোপণাঙ্গ হারালেন ভারতের সনাতন ধর্মের এক যুবক” শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা এবং উক্ত দাবিতে যমুনা টিভির নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি এডিটেড বা সম্পাদিত। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img