সম্প্রতি, “আমি চাইলে শেখ হাসিনা ১ মিনিট ক্ষমতায় থাকতে পারবে না, বললেন ড. ইউনুস” শীর্ষক শিরোনামে জার্মান ভিত্তিক গণমাধ্যম ডয়েচে ভেলে এর টকশো বিষয়ক অনুষ্ঠান DW খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায় এর একটি পর্বের খণ্ডিত ছোট ফুটেজ ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
টিকটকে উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি এই দুই পোস্ট মিলে প্রায় ১ লাখ ৭ হাজার বার দেখা হয়েছে। পোস্টগুলোতে প্রায় ২ হাজার দুইশত শত হাজার পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে এবং শেয়ার করা হয়েছে ৫১ বার।
ফেসবুকে প্রাচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে “আমি চাইলে শেখ হাসিনা ১ মিনিট ক্ষমতায় থাকতে পারবে না” শীর্ষক মন্তব্য করেননি বরং কোনো প্রকার গ্রহণযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই তার ভিন্ন ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজ ব্যবহার করে আলোচিত দাবিটি নামে প্রচার করা হয়েছে।
দাবিটি নিয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটিতে ডয়েচে ভেলে বাংলা বিভাগের প্রধান খালেদ মুহিউদ্দীন এবং অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একটি সাক্ষাৎকারের একটি অংশ দেখানো হয়। উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ডয়েচে ভেলের ‘DW খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়’ নামক ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি “মুখোমুখি প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত মূল ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওটির ৫ মিনিট ৫৩ সেকেন্ড থেকে ৬ মিনিট ৫৩ সেকেন্ড পর্যন্ত আলোচিত ভিডিওটিতে যুক্ত করা হয়েছে।
ভিডিওটি থেকে জানা যায়, এটি ইউনূসের নেওয়া একটি সাক্ষাৎকারের ভিডিও।
ভিডিওটির ৫ মিনিট ৫০ সেকেন্ডে খালেদ মুহিউদ্দীন ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রশ্ন করেন, “বর্তমান সরকার আরও স্পেসিফিক ভাবে বললে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনাকে স্পষ্টতই অপছন্দ করেন। অনেককিছুর জন্য আপনাকে দায়ী করেন, পদ্মা সেতু এবং এই সেই। এর কারণ কি বলে আপনি মনে করেন? আপনাকে কি তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেন নাকি সত্যিই তার কাছে এমন কিছু তথ্য রয়েছে যে আপনার বিশাল কোনো রাজনৈতিক অভিলাষ রয়েছে। আপনি কি রাজনৈতিক ভাবে তার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছেন বলে তিনি আপনাকে অপছন্দ করছেন? কি কারণেআপনার কি মনে হয়?”
এই প্রশ্নের জবাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “আমার মনে হয় উনি মনে করেন যে আমি দেশের সর্বোচ্চ ডাকু, সন্ত্রাসী কিংবা অপরাধী, আমি সেরা চোর। এজাতীয় জিনিস মনে করেন। কাজেই সেগুলো ব্যাখ্যা করেন উনি মুখে। উনি বলেন যে আমি সুদখোর, আমি ঘুষখোর। এমন সব কটু শব্দ ব্যবহার করেন যাতে মনে হয় যে আমার সম্পর্কে তার ধারণা খুবই খারপ।”
তবে এমন সময়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের থেকে, “আমি চাইলে শেখ হাসিনা এক মিনিট ক্ষমতায় থাকতে পারবে না” শীর্ষক এমন কোনো মন্তব্য শোনা যায়নি। এমনকি পুরো সাক্ষাৎকারে তিনি এমন কোনো মন্তব্য করেননি।
এছাড়া, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ফেসবুক পেজ, দেশিয় কিংবা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে অনুসন্ধানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এমন কোনো মন্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ডয়েচে ভেলের বাংলা বিভাগের প্রধান খালেদ মুহিউদ্দীন সমসাময়িক বিষয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একটি সাক্ষাৎকার নেন। যা ‘DW খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়’ নামক ইউটিউব চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়। সম্প্রতি, সেই সাক্ষাতকারের একটি দৃশ্য কাট করে ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে “আমি চাইলে শেখ হাসিনা এক মিনিট ক্ষমতায় থাকতে পারবে না” শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত দাবিটি সঠিক নয়। উক্ত সাক্ষাৎকারে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এমন কোনো মন্তব্য করেননি।
সুতরাং, ড. মুহাম্মদ ইউনূস খালেদ মুহিউদ্দীনের সাক্ষাৎকারে “আমি চাইলে শেখ হাসিনা ১ মিনিট ক্ষমতায় থাকতে পারবে না” শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- DW খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায় – মুখোমুখি প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস
- Rumor Scanner’s own analysis
হালনাগাদ/ Update
২৪ জুন, ২০২৪ : এই প্রতিবেদন প্রকাশ পরবর্তী সময়ে ফেসবুকেও একই দাবি সম্বলিত ভিডিও আমাদের নজরে আসার প্রেক্ষিতে উক্ত ভিডিওগুলোকে প্রতিবেদনে দাবি হিসেবে যুক্ত করা হলো।