ওমান থেকে ৭৭ টি জাহাজে বাংলাদেশে কয়লা আসার দাবিটি মিথ্যা

সম্প্রতি ‘ওমান থেকে ৮৫ লক্ষ ৯২ হাজার ৮৯৫ মেট্রিক টন কয়লাসহ ৭৭ টি বিশাল জাহাজ বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে’ শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

টিকটকে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ইউটিউবে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ওমান থেকে ৮৫ লক্ষ ৯২ হাজার ৮৯৫ মেট্রিক টন কয়লাসহ ৭৭ টি  জাহাজ বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা করার দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে কোনো ধরনের তথ্যসূত্র ছাড়াই তথ্যটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। 

তথ্যটির সত্যতা যাচাইয়ে রিউমর স্ক্যানার টিম প্রথমেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত পোস্টগুলোতে কোনো তথ্যসূত্র আছে কি না যাচাই করে দেখে। অনুসন্ধানে পোস্টগুলোতে কোনো তথ্যসূত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি দেশীয় ও ওমানের কোনো গণমাধ্যমেও এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

তবে ইংরেজি দৈনিক দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডে গত ৪ জুন ‘Fuel deals signed with Qatar and Oman, steps taken to buy coal: PM‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: The Business Standard

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে এক ভাষণে জানান, সরকার জ্বালানি সংকট সমাধানে কাতার ও ওমানের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালু করার জন্য কয়লা কিনতেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। 

Screenshot: The Business Standard

এর বাইরে প্রতিবেদনটি থেকে কয়লা আমদানির বিষয়ে আর কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এছাড়া বাংলাদেশের আরেকটি গণমাধ্যম বিজনেস ইনসাইডার বাংলাদেশের ওয়েবসাইটে গত ২৮ মে ‘Bangladesh-Oman foreign office consultations held in Muscat‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। তবে প্রতিবেদনটি থেকেও ওমান থেকে বাংলাদেশে কয়লাবাহী জাহাজ আসার ব্যাপারে কোনো তথ্যের উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

পরবর্তী অনুসন্ধানে বাংলাদেশ ওমান থেকে কয়লা আমদানি করে কি না এমন তথ্য যাচাইয়ে দেখা যায়, দেশের অন্যতম প্রধান পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ইন্দোনেশিয়া থেকে বঙ্গোপসাগরের রামনাবাদ চ্যানেল হয়ে কয়লা আসে। এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির জন্য অস্ট্রেলিয়া ও অন্যান্য দেশ থেকেও কয়লা আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে।

ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ছাড়াও গণমাধ্যম সূত্রে দেশে কয়লা আমদানির ক্ষেত্রে যেসব দেশের নাম পাওয়া যায়, সেখানেও ওমানের নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি বরং দেখা যায়, বাংলাদেশে বহু বছর ধরে ভারত এবং চীন কয়লা রফতানি করে আসছে। 

Screenshot: Somoy News 

এছাড়া অনুসন্ধানে দেখা যায়, ওমান থেকে  তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি আমদানিতে বাংলাদেশের ১০ বছর মেয়াদী একটি  চুক্তি রয়েছে। যা ২০১৮ সালের ৭ মে বাংলাদেশের জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের উপস্থিতিতে স্বাক্ষরিত হয়েছিল। 

Screenshot: bdnews24.com 

সম্প্রতি চলতি বছরের গত ১৪ মে এই চুক্তির ধারাবাহিকতায় ওমানকে অতি দ্রুত কয়েক কার্গো এলএনজি দেওয়ার অনুরোধ করেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। 

Screenshot: Bangla Tribune 

অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, কয়লা আমদানির ক্ষেত্রে ওমানের সাথে বাংলাদেশের কোনো বানিজ্যিক সম্পর্ক নেই। 

এ পর্যায়ে ওমান থেকে ৮৫ লক্ষ ৯২ হাজার ৮৯৫ মেট্রিক টন কয়লা আসার ব্যাপারে অধিকতর অনুসন্ধানের লক্ষ্যে রিউমর স্ক্যানার টিম বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপপ্রধান তথ্য কর্মকর্তা মীর মোহাম্মদ আসলাম উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করে। তিনি বিষয়টিকে শতভাগ গুজব বলে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেন।

মূলত, গত ২৫ মে কয়লা সংকটের কারণে বন্ধ হয়ে যায় দেশের বৃহত্তম পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ইউনিট। এরপর কয়লার অভাবে সোমবার, ৫ জুন বেলা ১২টার দিকে বন্ধ হয়ে যায় পটুয়াখালীর পায়রার তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটটিও। এর মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওমান থেকে ৮৫ লক্ষ ৯২ হাজার ৮৯৫ মেট্রিক টন কয়লাসহ ৭৭ টি  জাহাজ বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা করার দাবিতে একটি তথ্য ছড়িয়ে পড়ে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, কোনো ধরনের তথ্যসূত্র ছাড়াই সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে উক্ত তথ্যটি প্রচার করা হচ্ছে। 

উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে কয়লা সংকটে পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেলেও বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্লান্ট ম্যানেজার প্রকৌশলী শাহ আব্দুল মাওলা গণমাধ্যমকে জানান, বিদ্যুৎকেন্দ্রটির জন্য আগামী ২৫ জুনের মধ্যে ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা নিয়ে আসবে প্রথম জাহাজ। ফলে ২৬ জুন থেকে আবারও উৎপাদন শুরু হতে পারে দেশের সর্ববৃহৎ এই তাপ বিদুৎকেন্দ্রটিতে। এছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রটির জন্য কয়লা নিয়ে পরপর আরও ১০টি জাহাজ আসারও কথা রয়েছে। 

সুতরাং, ওমান থেকে ৭৭ টি জাহাজে বাংলাদেশে ৮৫ লক্ষ ৯২ হাজার ৮৯৫ মেট্রিক টন কয়লা আসার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র 

আরও পড়ুন

spot_img