গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে ৭ এপ্রিল দেশজুড়ে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভের মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে বাটাসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে লুটপাটের ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন শহরে দোকান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুরের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করতে নির্দেশ দেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম। এরই প্রেক্ষিতে আজ (০৯ এপ্রিল) সকাল ৮ টা পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ৭২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এসব ঘটনায় অন্তত গত ০৮ এপ্রিল দুপুর থেকে ‘বাটা জুতা লুটপাট যৌথ বাহিনীর অভিযানে জুতাসহ ৫৫জন আটক, সবাই ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মী!’ শীর্ষক একটি দাবি জাতীয় দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সূত্রে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।

গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে ৭ এপ্রিল দেশজুড়ে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভের মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে বাটাসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে লুটপাটের ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন শহরে দোকান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুরের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করতে নির্দেশ দেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম। এরই প্রেক্ষিতে আজ (০৯ এপ্রিল) সকাল ৮ টা পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ৭২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এসব ঘটনায় অন্তত গত ০৮ এপ্রিল দুপুর থেকে ‘বাটা জুতা লুটপাট যৌথ বাহিনীর অভিযানে জুতাসহ ৫৫জন আটক, সবাই ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মী!’ শীর্ষক একটি দাবি জাতীয় দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সূত্রে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।

একই ঘটনায় আটককৃতরা ছাত্রশিবির, ছাত্রদলের ও সমন্বয়ক দাবিতে কতিপয় ফেসবুক পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘বাটা জুতা লুটপাট যৌথ বাহিনীর অভিযানে জুতাসহ ৫৫জন আটক, সবাই ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মী!’ শীর্ষক তথ্যটি সঠিক নয় এবং দৈনিক আমার দেশও এ সংক্রান্ত কোনো সংবাদ প্রকাশ করেনি। প্রকৃতপক্ষে, আমার দেশ এর নাম ও লোগো ব্যবহার করে পরিচালিত ভুয়া একটি ফেসবুক পেজ থেকে উক্ত দাবি সংক্রান্ত একটি পোস্টের পর বিষয়টিকে সত্য ভেবে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিকভাবে রাজনৈতিক পরিচয় জানা যায়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে দাবিটির সূত্রপাত হিসেবে প্রচারিত আমার দেশ নামক ফেসবুক পেজটি খুঁজে বের করে রিউমর স্ক্যানার। গতকাল (০৮ এপ্রিল) সন্ধ্যা ০৭ টা ৫৬ মিনিটে প্রচারিত আলোচিত পোস্টটিতে দাবি করা হয়, ‘বাটা জুতা লুটপাট যৌথ বাহিনীর অভিযানে জুতাসহ ৫৫জন আটক, সবাই ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মী!’
কিন্তু পেজটির ট্রান্সপারেন্সি সেকশন ঘেঁটে দেখা যায়, উক্ত পেজটি গত ১৯ মার্চ খোলা হয়েছে। এছাড়া পেজটি আমার দেশ পত্রিকার মূল পেজ নয়।

বিষয়টি নিয়ে আরও অনুসন্ধানে দেখা যায়, সমজাতীয় দাবি একই দিনে অন্তত দুপুর থেকে প্রচার হতে দেখা যায়।
পরবর্তী অনুসন্ধানে আমার দেশ পত্রিকার মূল ফেসবুক পেজ এবং ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করে আলোচিত দাবি সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
তবে, গত ০৮ এপ্রিল গণমাধ্যমটির ওয়েবসাইটে “কেএফসি-বাটায় ভাঙচুরের ঘটনায় ছাত্রলীগ কর্মীসহ আটক ১৪”- শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। সংবাদে দাবি করা হয়, সিলেটে বিক্ষোভ মিছিল থেকে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় ছাত্রলীগ কর্মীসহ ১৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। এর আগে সোমবার তৌহিদী জনতার মিছিলে মিশে কেএফসি-বাটায় ভাঙচুর চালায় ছাত্রলীগ কর্মীরা।
কিন্তু পুলিশের যে বক্তব্য এই সংবাদে রয়েছে তাতে আটককৃতদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয়ের বিষয়ে জানানো হয়নি।
অর্থাৎ, সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য উল্লেখ ছাড়াই এই সংবাদে আটককৃতদের রাজনৈতিক পরিচয় হিসেবে বর্তমানে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
একই সংবাদ সিলেটের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এবং মূল ধারার গণমাধ্যমেও (এখানে, এখানে) এসেছে। সেখানে আটককৃতদের রাজনৈতিক কোনো পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি।
বিষয়টি নিয়ে আরো জানতে সিলেট এবং ঢাকার পুলিশ প্রশাসনের সাথে কথা বলেছে রিউমর স্ক্যানার।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) মো. শাহরিয়ার আলম রিউমর স্ক্যানারকে জানান, (আটককৃতদের) প্রাথমিকভাবে রাজনৈতিক পরিচয় পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ, এখানে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ বা যুবলীগের কাউকে পাওয়া যায়নি। বাকিটা রিমান্ডে দেওয়ার পর জানা যাবে।
গণমাধ্যমকেও তারা আটককৃতদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয়ের বিষয়ে তথ্য দেননি বলে জানান।
চট্টগ্রামের কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মো: আবদুল করিম, গাজীপুর গাছা থানার ওসি আলী মোহাম্মদ রাশেদ এবং খুলনার সোনাডাঙা থানার ওসি মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম রিউমর স্ক্যানারকে জানান, প্রাথমিকভাবে রাজনৈতিক পরিচয় জানা যায়নি।
কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মহিনুল ইসলাম রিউমর স্ক্যানারকে বলেন, দলীয় পরিচয় শনাক্ত করা প্রয়োজন মনে হয়নি। তাই করা হয়নি। এরা দুর্ষ্কৃতিকারী। তবে, এদের দলীয় পরিচয় আছে। কিন্তু প্রয়োজন মনে করিনি তাই যাচাই করিনি।
পুলিশ সদর দপ্তর থেকে রিউমর স্ক্যানারকে জানানো হয়েছে, এদের সবাইকেই ভিডিও ফুটেজ দেখে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে কোনো কাজ করা হয়নি এখনো। তবে, গ্রেফতারকৃতরা সবাই ভাঙচুর, লুটপাটের সাথে জড়িত।
সুতরাং, দৈনিক আমার দেশ সূত্রে প্রচারিত ‘বাটা জুতা লুটপাট যৌথ বাহিনীর অভিযানে জুতাসহ ৫৫জন আটক, সবাই ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মী!’ শীর্ষক দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Amar Desh- কেএফসি-বাটায় ভাঙচুরের ঘটনায় ছাত্রলীগ কর্মীসহ আটক ১৪
- Amar Desh- Fake Facebook Page
- Amar Desh- Fake Facebook Page Post
- Statement of Local Police Stations