সম্প্রতি অনলাইনে এক কাপড়ের দোকানে মারামারির একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, ‘নরসিংদীতে বিএনপি’র এক নেতার দোকানে কিছু বোনেরা বোরকা কিনতে গিয়েছিলেন। ওই নেতা বোরকার দাম বলেছেন ৩,২০০ টাকা। কাস্টমার মহিলারা দাম বলেছিলেন ১,৩০০ টাকা। এতে ওই নেতা রেগে গিয়ে বলেন,ওরা জামায়াতে ইসলামী’র মহিলা কর্মী,বলে তাদের উপর হামলা শুরু করে দেন।’

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
আলোচিত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্টগুলো সম্মিলিতভাবে প্রায় ১০ লক্ষেরও অধিক বার দেখা হয়েছে এবং ১০ হাজারেরও অধিক পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্টগুলোতে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।
একই দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ইউটিউবে প্রচারিত দাবি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
থ্রেডসে প্রচারিত দাবি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
এছাড়াও, একই ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, ‘নরসিংদীতে জামায়াতের এক নেতার দোকানে কিছু বোনেরা বোরকা কিনতে গিয়েছিলেন। ওই নেতা বোরকার দাম বলেছেন ৩,২০০ টাকা। কাস্টমার মহিলারা দাম বলেছিলেন ১,৩০০ টাকা। এতে ওই নেতা রেগে গিয়ে বলেন,ওরা বিএনপির মহিলা দলের কর্মী। এরপর তাদের উপর হামলা শুরু করে দেন’।
এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওতে দেখা মারামারির সঙ্গে বিএনপি বা জামায়াতে ইসলামী কোনো রাজনৈতিক দলের সংশ্লিষ্টতা নেই। মারামারিতে জড়িত দুই দোকানির কেউই এসব দলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন। প্রকৃতপক্ষে, দীর্ঘদিনের ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব থেকে ১৯ অক্টোবর তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘hello narsingdi’ নামের একটি ফেসবুক পেজে গত ১৯ অক্টোবরে প্রচারিত একটি ভিডিও পোস্ট পাওয়া যায়। ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওতে প্রদর্শিত দৃশ্যের মিল পাওয়া যায়। ভিডিওটি সম্পর্কে ক্যাপশনে বলা হয়, ‘নরসিংদী কালিবাজারে মারামারি’।
এছাড়াও, অনুসন্ধানে ‘Channel A1’ নামের একটি ফেসবুক পেজেও এ বিষয়ে গত ২১ অক্টোবরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, নরসিংদী শহরের কালিবাজারে কথা কাটাকাটির জেরে এক কাপড় ব্যবসায়ীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। বিসমিল্লাহ মার্কেটের তানহা ফ্যাশনের মালিক বাবু জানান, ‘হিজাব হ্যাভেন’ দোকানের মালিক ও কর্মচারীরা মিলে তাকে পিটিয়ে আহত করেছেন।
এরই সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে মূলধারার গণমাধ্যম ‘কালবেলা’র ওয়েবসাইটে গত ২৪ অক্টোবরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিও থেকে নেওয়া একটি স্থিরচিত্র বা স্ক্রিনশটেরও সংযুক্তি পাওয়া যায়।

আলোচিত ভিডিওতে প্রদর্শিত মারামারির প্রেক্ষাপটের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, নরসিংদীতে ব্যবসায়ী প্রতিহিংসার জেরে খাদিজা আক্তার (৪২) নামে এক মহিলা ব্যবসায়ীর উপর প্রকাশ্যে হামলার ঘটনা ঘটেছে, যেখানে খাদিজা সহ চারজন আহত হন। তানহা ফ্যাশনের মালিক সোহাগ হোসেন বাবু সরকার, যার দোকানের চেয়ে খাদিজার হিজাব হ্যাভেনে ক্রেতার ভিড় বেশি হওয়ায় তিনি ক্ষুব্ধ ছিলেন, এই হামলার জন্য দায়ী। গত ১৯ অক্টোবর দুপুরে খাদিজার দোকানের এক কর্মচারীর হাসিকে কেন্দ্র করে বাবু সরকার লাঠি নিয়ে হামলা চালায়। হামলার সিসিটিভি ফুটেজ ভাইরাল হলেও, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এটিকে ‘বিএনপি নেতার হামলায় জামায়াতের মহিলা কর্মী আহত’ বলে ভুলভাবে প্রচার করা হচ্ছে। খাদিজা ও নরসিংদী বাজার বণিক সমিতির সভাপতি বাবুল সরকার উভয়েই কালবেলাকে জানিয়েছেন যে ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই, এটি সম্পূর্ণ ব্যবসায়িক প্রতিহিংসা জনিত। অভিযুক্তের ভাই দাবি করেছেন যে খাদিজার কর্মচারী তার মাকে গালি দেওয়ায় তার ভাই উত্তেজিত হয়ে হামলা করে। বাজার কমিটি দ্রুত বিষয়টি সমাধানের জন্য বসবে এবং উভয় পক্ষ সমঝোতার চেষ্টা করছে। বিএনপি ও জামায়াতের স্থানীয় নেতারাও অনলাইনে প্রচারিত রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার তথ্যকে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা বলে জানিয়েছেন।
এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে আলোচিত ঘটনাটি প্রকৃতপক্ষে অরাজনৈতিক এবং ব্যবসায়িক কেন্দ্রিক।
সুতরাং, নরসিংদীতে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের ঘটনাকে জামায়াত-বিএনপির রাজনৈতিক সংঘর্ষ দাবিতে প্রচার করা হয়েছে, যা বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- Hello narsingdi – নরসিংদী কালিবাজারে মারামারি
- Channel A1 – নরসিংদীর কালিবাজারে কাপড় ব্যবসায়ীকে মারধর, অভিযুক্ত হিজাব হ্যাভেনের মালিক ও কর্মচারীরা
- Kalbela – পাশের দোকানে ক্রেতা বেশি, মালিককে মারধর অন্য ব্যবসায়ীর





