নির্বাচন বর্জন করে শাহজাহান ওমরের ক্ষমা চাওয়ার গুজব

সম্প্রতি, “সিইসি নিজেই হাসিনাকে অবৈধ ঘোষণা করলো নির্বাচন বর্জন করে ক্ষমা চাইলো শাহজাহান ওমর” শীর্ষক শিরোনাম এবং একই তথ্য সম্বলিত থাম্বনেইলে ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম ইউটিউবে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।

শাহজাহান

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রধান নির্বাচন কমিশনার জনাব কাজী হাবিবুল আউয়াল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবৈধ ঘোষণা করেননি এবং নির্বাচন বর্জন করে শাহজাহান ওমরের ক্ষমা চাওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার ভিডিও ক্লিপ এবং ছবি নিয়ে তৈরি একটি ভিডিও প্রতিবেদন যেখানে আলোচিত দাবিটি প্রসঙ্গে কয়েকটি ভিডিও দেখানো হয়।

ভিডিওটি’র সংবাদপাঠ অংশে বলা হয়, “দর্শক ইসি নিজেই এই সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করলেন। যেকোনো সময় পালিয়ে যাবে এবং এক সপ্তাহের মধ্যে ভয়ঙ্কর বিপদ আসতেছে। শাহজাহান বিরত্তোম এটি বুঝেই কিন্তু আওয়ামীলীগ থেকে আবারও পল্টি নিলো।”

উক্ত ভিডিওটিতে দেখানো ভিন্ন ভিন্ন ভিডিও ক্লিপের বিষয়ে পৃথকভাবে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম।

ভিডিও যাচাই – ০১

আলোচিত ভিডিওটিতে দেখানো প্রথম ভিডিও ক্লিপটিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালকে দেখানো হয়। উক্ত ভিডিও ক্লিপটির অনুসন্ধানে কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ভয়েজ অব আমেরিকা বাংলার ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৯ ডিসেম্বর  ‘হাবিবুল আউয়াল : তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে কোন মন্তব্য করা এ পর্যায়ে সমীচীন হবে না’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

এই ভিডিওটির ২৩ মিনিট ২২ সেকেন্ড সময় থেকে পরবর্তী এক মিনিট সময় পর্যন্ত অংশটুকু আলোচিত ভিডিওটিতে যুক্ত করা হয়েছে। 

Video Comparison : Rumor Scanner 

উক্ত ভিডিওটিতে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে ভয়েজ অব আমেরিকা বাংলায় এক সাক্ষাৎকার দেন তিনি। উক্ত সাক্ষাৎকারে তিনি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন।

ভিডিও যাচাই – ০২ এবং ০৩ 

আলোচিত দাবিটি প্রসঙ্গে পরবর্তীতে Voice Bangla নামক ইউটিউব চ্যানেলের গত ১৯ ডিসেম্বর “এক সপ্তার মধ্যে কি ঘটতে যাচ্ছে? ইসি আনিসুর কিসের ইঙ্গিত দিলেন?। Mostofa Feroz। voice bangla” শীর্ষক শিরোনাম এবং গত ২০ ডিসেম্বর “শাহজাহান ওমরের পাশ থেকে সরে গেলো আওয়ামী লীগও..। Mostofa Feroz। voice bangla” শীর্ষক শিরোনামে পৃথক দুইটি ভিডিও (,) খুঁজে পাওয়া যায়।

এই দুইটি ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওগুলোর হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়। 

Video Comparison : Rumor Scanner 
Video Comparison : Rumor Scanner 

ভিডিও দুটিতেই ভয়েজ বাংলার প্রতিষ্ঠাতা এবং সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজ আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কতিপয় কিছু গণমাধ্যম প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদ প্রতিবেদন পাঠ করে নিজস্ব মতামত ব্যাক্ত করেন। 

ভিডিও যাচাই – ০৪ 

আলোচিত ভিডিওটির সর্বশেষ অংশে সাবেক সংসদ সদস্য এবং রাজনীতিবিদ গোলাম মাওলা রনির একটি ভিডিও দেখানো হয়। উক্ত ভিডিওটির অনুসন্ধানে কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে গোলাম মাওলা রনির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে গত ২০ ডিসেম্বর একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

Video Comparison : Rumor Scanner 

উক্ত ভিডিওতে নির্বাচন কমিশনার আনিসুর রহমানসহ আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তিনি তার নিজস্ব অভিমত ব্যাক্ত করেন। 

অর্থাৎ প্রচারিত ভিডিওটিতে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার যে ভিডিও ক্লিপগুলো যুক্ত করা হয়েছে সেগুলোতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার জনাব কাজী হাবিবুল আউয়ালের অবৈধ ঘোষণা করার এবং নির্বাচন বর্জন করে শাহজাহান ওমরের ক্ষমা চাওয়া বিষয়ক কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এছাড়া বিষয়গুলো নিয়ে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চ করেও গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে দাবিগুলোর সত্যতা পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, গত ৩০ নভেম্বর হঠাৎ করেই বিএনপি থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন বিএনপির সেসময়ের ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর। এর পরপর তাকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করার কথা জানায় বিএনপি। এর আগে গত ২৯ নভেম্বর ২৮ অক্টোবরের বাস পোড়ানোর ঘটনার মামলায় জামিন পান তিনি।

গত ২২ ডিসেম্বর ঝালকাঠির রাজাপুর ডাকবাংলো মোড়ে ফাজিল মাদ্রাসা মাঠে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মত বিনিময়কালে শাহজাহান ওমর বলেন,  ‘এবারকার নির্বাচন তো, কী নির্বাচন পাতছে। এটা তো কোনো নির্বাচন না। আরে বেডা! নির্বাচনের সক্রিয় প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকলে, ভালো প্লেয়ার না থাকলে, উভয় পক্ষের মাইকিং, স্লোগান, মিটিং-মিছিল না থাকলে নির্বাচন মনে হয় না।’

মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সবচেয়ে বড় চমক ছিল নিজ দলের নেতা বসিয়ে দিয়ে বিএনপি নেতা শাহজাহান ওমরকে ঝালকাঠি-১ আসনে নৌকার মনোনয়ন প্রদান। শাহজাহান ওমরকে মনোনয়ন প্রদানের পর থেকে তিনি আগামী নির্বাচন নিয়ে নানা বক্তব্য দিয়ে বার বারই খবরের শিরোনাম হচ্ছেন। এছাড়া আগামী নির্বাচন নিয়ে পেশাগত কারণে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল প্রায় প্রতিদিনই গণমাধ্যমে কথা বলছেন। এরই ধারাবাহিকতায় ইন্টারনেটে “সিইসি নিজেই হাসিনাকে অবৈধ ঘোষণা করলো নির্বাচন বর্জন করে ক্ষমা চাইলো শাহজাহান ওমর” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত দাবিগুলো সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ এবং ছবি যুক্ত করে তাতে চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে দাবিগুলোর সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সিইসির অবৈধ ঘোষণা এবং নির্বাচন বর্জন করে শাহজাহান ওমরের ক্ষমা চাওয়ার দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যগুলো মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র 

আরও পড়ুন

spot_img