সম্প্রতি, রাজধানীর একটি কলেজের ছাত্রী-শিক্ষকের ব্যক্তিগত আলাপ ভাইরাল হওয়াকে কেন্দ্র করে নানারূপ প্রতিক্রিয়ায় সরব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো। এরই ধারাবাহিকতায় উক্ত ছাত্রী ও শিক্ষকের বিয়ে হয়েছে শীর্ষক একটি দাবি ছড়িয়ে পড়েছে ইন্টারনেটে।
কী দাবি করা হচ্ছে?
ছড়িয়ে পড়া একাধিক পোস্টে এক নারী ও পুরুষের বিয়ের দুইটি ছবি পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, “ভাইরাল হওয়া দুই অতৃপ্ত প্রেমিক প্রেমিকা মানে ইংলিশ স্যার আর ছাত্রীর বিয়া সম্পূর্ন।” উক্ত দাবিতে ছড়িয়ে পড়া কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

কিছু পোস্ট করা হয়েছে একটি ভিডিও যুক্ত করে। সেখানেও একই পুরুষ ও নারীকে দেখা গেছে। ক্যাপশনে দাবি করা হয়েছে, “সবশেষে বিয়ে করে ফেললেন Viral হওয়া সেই English Teacher & Student”।

এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
কিছু পোস্টে ছবি এবং ভিডিও সংযুক্ত না করেই দাবি করা হয়েছে, “আলোচিত সেই স্যার ও ছাত্রী বিয়ে করছে তা মাত্র জানা আমি.!”
উক্ত দাবিতে ছড়িয়ে পড়া কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

উক্ত দাবিতে ছড়িয়ে পড়া কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
একই দাবিতে শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ) এবং এখানে(আর্কাইভ)।

Screenshot: Tiktok
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইউটিউবে একই দাবিতে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে(আর্কাইভ) এবং এখানে(আর্কাইভ)।

Screenshot: Youtube
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভাইরাল ছাত্রী শিক্ষকের বিয়ে হয়েছে শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয় বরং গত ফেব্রুয়ারিতে বরিশালে বিয়ে হওয়া ভিন্ন এক দম্পতির বিয়ের ছবি ও ভিডিও ব্যবহার করে উক্ত দাবিটি ছড়িয়ে পড়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে রিউমর স্ক্যানার টিম ভাইরাল শিক্ষক ও ছাত্রীর বিষয়ে অনুসন্ধানে মূল ধারার সংবাদমাধ্যম ‘Rtv’ এর ওয়েবসাইটে গত ১৭ এপ্রিল প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানীর রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের এক শিক্ষকের সঙ্গে ছাত্রীর ‘ব্যক্তিগত আলাপের’ স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন ভুক্তভোগী মাহির আসেফ পুলক (২৬)।
আরটিভি লিখেছে, “উত্তরখান থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কাজী আবুল কালাম বিষয়টি নিশ্চিত করে গণমাধ্যমকে বলেন, থানার এসআই (নিরস্ত্র) মো. মনিরুজ্জামানকে জিডির বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
উক্ত জিডির একটি কপি রিউমর স্ক্যানারের কাছেও এসেছে।
অর্থাৎ, ভাইরাল শিক্ষক ও ছাত্রীর বিয়ে হয়েছে দাবি করা হলেও সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী উক্ত শিক্ষক জিডি করেছেন ছাত্রীর বিরুদ্ধে। তাছাড়া, তাদের বিয়ে হয়েছে শীর্ষক কোনো তথ্য গণমাধ্যমেও আসেনি।
ছবি ও ভিডিওগুলোর বিষয়ে অনুসন্ধান
ছড়িয়ে পড়া ছবিগুলো বিশ্লেষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম দেখেছে, ছবিগুলোর নিচের দিকে টিকটকের @Queen লেখা একটি ইউজার নেমসহ একাধিক হ্যাশট্যাগ দেখা যাচ্ছে।

উক্ত তথ্যগুলোর সূত্র ধরে পরবর্তীতে অনুসন্ধানে টিকটকে ‘syedchaity’ নামক একটি অ্যাকাউন্টে গত ১২ মার্চ প্রকাশিত একটি ভিডিও (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওতে থাকা বিয়ের পাত্র পাত্রীর সাথে আলোচিত ছবিটির পাত্র পাত্রীর মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে আরও অনুসন্ধান করতে গিয়ে ফেসবুকে Rakesh Rakib নামক একটি পেজে ১৭ এপ্রিল একই পাত্র-পাত্রীর বিয়ের ভিডিও খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
ভিডিওর ক্যাপশন থেকে জানা যায়, পাত্রের নাম হিমু এবং পাত্রী চৈতী। দশ বছরের প্রেমের সম্পর্ক শেষে তারা দুইজন বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন।

পেজটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, রাকেশ রাকিব মূলত একজন ফটোগ্রাফার। তার পেজে একই পাত্র পাত্রীর গত ২৭ মার্চ প্রকাশিত হলুদ অনুষ্ঠানের ভিডিও-ও খুঁজে পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
রাকেশ রাকিব তার পেজে গত ২৭ মার্চ আরেক পোস্টে একই দম্পতির বেশকিছু ছবি প্রকাশ করেন।

পরবর্তীতে ফেসবুকে Days of Diba নামক একটি পেজে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত একই পাত্র পাত্রীর বিয়ের ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, রাজধানীর একটি কলেজের ছাত্রী-শিক্ষকের ব্যক্তিগত আলাপ প্রকাশ্যে আসে গত ১৫ এপ্রিল। কিন্তু তাদের বিয়ে হয়েছে শীর্ষক দাবিতে ছড়িয়ে পড়া ছবি অনলাইনে রয়েছে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে।
একইভাবে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে আমরা Syed Chaity নামক টিকটক অ্যাকাউন্টসহ এডভান্স টুলস ব্যবহার করে একাধিক উপায়ে খুঁজেও ভিডিওটির মূল সূত্র পাওয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে এবং সার্বিক বিষয়ে জানতে রিউমর স্ক্যানার টিমের পক্ষ থেকে রাকেশ রাকিবের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, উক্ত ভিডিওটিও Syed Chaity নামক টিকটক অ্যাকাউন্টে রয়েছে। তবে উক্ত ভিডিওর প্রাইভেসি বন্ধুতালিকায় সীমাবদ্ধ থাকায় ভিডিওটি সকলের জন্য উন্মুক্ত নয়৷ জনাব রাকেশ উক্ত ভিডিও সমেত আলোচিত পোস্টের স্ক্রিনরেকর্ড পাঠিয়েছেন রিউমর স্ক্যানারের কাছে। রাকেশ রাকিব নিশ্চিত করেছেন, উক্ত টিকটক অ্যাকাউন্টটি পাত্রী চৈতীর।
উক্ত স্ক্রিনরেকর্ড থেকে নেওয়া একটি স্ক্রিনশট দেখুন –

রাকেশের মাধ্যমে রিউমর স্ক্যানার টিম জানতে পারে, পাত্র নীরব হিমু এবং পাত্রী মুনমুন আহমেদ চৈতী। তাদের দশ বছরের সম্পর্ক ছিল। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি বরিশালে বিয়ে হয় এই দম্পতির। হিমু একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন এবং পাত্রী চৈতী গৃহিণী। পাত্র হিমু রাজধানীর সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি এবং পাত্রী চৈতী বরিশাল বিএম কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে পরবর্তীতে রিউমর স্ক্যানার টিম নীরব হিমুর সাথে যোগাযোগ করলে তিনিও তথ্যগুলো নিশ্চিত করেন এবং বিষয়টি তাদের বেশ বিব্রত করছে বলে জানান।
মূলত, সম্প্রতি রাজধানীর একটি কলেজের ছাত্রী-শিক্ষকের ব্যক্তিগত আলাপ ভাইরাল হওয়াকে কেন্দ্র করে ‘উক্ত ছাত্রী ও শিক্ষকের বিয়ে হয়েছে’ দাবিতে কিছু ছবি ও ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত ছাত্রী ও শিক্ষকের বিয়ে হয়নি। তাছাড়া, ভাইরাল হওয়া বিয়ের ছবি ও ভিডিওগুলো গত ১৭ ফেব্রুয়ারি বরিশালে বিয়ে হওয়া ভিন্ন এক দম্পতির।
সুতরাং, ভাইরাল ছাত্রী-শিক্ষকের বিয়ে হয়েছে দাবিতে ভিন্ন দম্পতির বিয়ের দৃশ্য প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Syedchaity: Tiktok Video
- Rakesh Rakib: Himu X Chaity || Wedding
- Rakesh Rakib: Himu & Chaity ||Haldi ceremony
- Statement from Nirob Himu
- Statement from Rakesh Rakib
- Days Of Diba: ১০ বছরের ভালোবাসার পূর্ণতা