সম্প্রতি, নোয়াখালীতে পুলিশের অভিযানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রসহ দুইজন শিবির কর্মী আটক হয়েছে দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ছবি প্রচার করা হয়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত একই ছবি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
উক্ত ছবিটি ব্যবহার করে অনলাইন গণমাধ্যম ঢাকা পোস্টের ডিজাইন সংবলিত একটি ফটোকার্ডও ফেসবুকে প্রচার করা হয়। ওই ফটোকার্ডসহ ফেসবুকে প্রচারিত দাবি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, নোয়াখালীতে পুলিশের অভিযানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রসহ দুই শিবির কর্মী আটক হওয়ার দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, ২০২১ সালে সিলেটের মৌলভীবাজারে ‘জিহাদী বই ও লিফলেটসহ’ দুই শিবির নেতা গ্রেফতার হন। এ ঘটনায় প্রকাশিত সংবাদে ব্যবহৃত তাদের ছবির সঙ্গে ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত আগ্নেয়াস্ত্রের ছবি ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে যুক্ত করে এবং এই ছবির সাহায্যে ঢাকা পোস্টের নামে ভুয়া ফটোকার্ড তৈরি করে সম্প্রতি অস্ত্রসহ দুই শিবির কর্মী আটকের দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
আলোচিত দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ঢাকা পোস্টের লোগো সংবলিত ফটোকার্ডটি পর্যালোচনা করে দেখে রিউমর স্ক্যানার। এতে ফটোকার্ডটি প্রচারের তারিখ হিসেবে ২৪ অক্টোবর ২০২৫ এর উল্লেখ করা হয়েছে।

তবে ঢাকা পোস্টের ফেসবুক পেজ পর্যালোচনা করে গত ২৪ অক্টোবর এমন কোনো ফটোকার্ড প্রচার করতে দেখা যায়নি। এছাড়াও তাদের ওয়েবসাইটেও এমন কোনো প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি অন্যকোনো গণমাধ্যমেও আলোচিত দাবিতে উক্ত ছবি সম্বলিত কোনো প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে প্রচারিত ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম একুশে টেলিভিশনের ওয়েবসাইটে ২০২১ সালের ১৬ অক্টোবর জিহাদী বই লিফলেটসহ ২ শিবির নেতা আটক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত আটক ব্যক্তিদের ছবির সাথে উক্ত প্রতিবেদনে ব্যবহৃত আটক ব্যক্তিদের ছবির হুবহু মিল রয়েছে। কিন্তু প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটির মত নিচের দিকে কোনো আগ্নেয়াস্ত্রের ছবি দেখা যায়নি। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, আটককৃতরা হলেন মৌলভীবাজার টাউন সিনিয়র মাদ্রাসার তৎকালীন ছাত্রশিবিরের সভাপতি সাব্বির ইসলাম তানভির ও তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দিন মোঃ বখতিয়ার। পুলিশের এক অভিযানে মৌলভীবাজার শহরের পূর্ব সুলতানপুর এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এসময় তাদের সাথে বিপুল সংখ্যক জিহাদী বই, লিফলেট, চাঁদা আদায়ের রশিদ ছিল। তবে প্রতিবেদনের কোথাও তাদেরকে অস্ত্রসহ গ্রেফতারের কথা বলা হয়নি।
একই ঘটনায় সেসময় আরেক ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম যমুনা টেলিভিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনও পাওয়া যায়। যেখানেও তাদের বিষয়ে একই তথ্য পাওয়া গেলেও অস্ত্রের উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলোর সাথে যুক্ত আগ্নেয়াস্ত্রের ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ছবিটি ২০২২ সালে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডে দেশের ‘সর্বশেষ’ বন্দুক ব্যবসায়ী নাসির আহমেদকে নিয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে নেওয়া হয়েছে।

সুতরাং, ২০২১ সালে দুই শিবির নেতা আটকের ছবিকে সাম্প্রতিক সময়ে নোয়াখালীতে পুলিশের অভিযানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রসহ শিবিরের কর্মী আটকের দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- Ekushey TV Website: জিহাদী বই লিফলেটসহ ২ শিবির নেতা আটক
- Jamuna TV Website: বিপুল সংখ্যক জিহাদী বইসহ গ্রেফতার ছাত্র শিবিরের দুই নেতা
- The Business Standard Website: Nasir Ahmed: The last of the gun sellers
- Rumor Scanner’s Analysis





