সংসদীয় আসন পুনর্বহালের দাবিতে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় বিক্ষোভ-অবরোধ কর্মসূচি চলছে কিছুদিন ধরে। গত ১৫ ই সেপ্টেম্বর এ অবরোধ কর্মসূচি সহিংস রুপ নেয়। বিক্ষুব্ধ জনতা ভাঙ্গা থানা ও উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে এবং উপজেলা অফিসার্স ক্লাবে অগ্নিসংযোগও করে। এরই প্রেক্ষিতে, “গতকাল ভাঙ্গা সার্কিট হাউসে আগুন দিয়েছে কমলমতি আইধ ধামড়ারা, আমি অবশ্য দুই পক্ষের সাথেই থাকি! কিন্তু জানবার মুঞ্চায় এরা কবে যমুনা পুড়াবে এইভাবে.! সেই দিন আমি কোমলমতি ছাত্র ছাত্রিদের পক্ষে থাকবো.!!” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রচারিত ভিডিওতে একটি ভবনে ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা যায়।

উল্লিখিত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ইন্সটাগ্রামে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভবনে আগুনের এই ভিডিওটি ফরিদপুরের ভাঙ্গা সার্কিট হাউসের নয় এবং ভাঙ্গা সার্কিট হাউসে অগ্নিসংযোগের কোনো ঘটনাও ঘটেনি। প্রকৃতপক্ষে, এটি নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শর্মা অলির বাসভবনে বিক্ষোভকারীদের অগ্নিসংযোগের ঘটনার ভিডিও।
অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটির কিছু কী-ফ্রেম রিভার্স সার্চ করে ভারতীয় গণমাধ্যম ‘Press Trust of India’ এর এক্স অ্যাকাউন্টে গত ০৯ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত পোস্টে সংযুক্ত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল রয়েছে।

উক্ত পোস্টে বলা হয়, নেপালের কাঠমান্ডুতে কে.পি. শর্মা অলির বাসভবনে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। এর আগে দিনেই কথিত দুর্নীতির অভিযোগে সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভের মধ্যে নেপালের প্রধানমন্ত্রী অলি পদত্যাগ করেন।
এ বিষয়ে আরো অনুসন্ধান করে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম রয়টার্সের ওয়েবসাইটে গত ৯ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সেদিন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে.পি. শর্মা ওলিকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করে ক্ষুব্ধ তরুণরা। দুর্নীতিবিরোধী এই আন্দোলনে তারা কারফিউ উপেক্ষা করে রাস্তায় নামে এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। তার আগের দিনই বিক্ষোভের প্রথম ধাপে ১৯ জনের প্রাণহানি ঘটে। বিক্ষোভের মূল সূচনা হয় সরকারের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত থেকে। পার্লামেন্টে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এর পরেই সরকার নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে বাধ্য হয়। তবে ততক্ষণে ১৯ জন প্রাণ হারিয়েছে এবং আরও অন্তত ১০০ জন আহত হয়েছে।
অর্থাৎ, আগুনের এই ভিডিওটি ভাঙ্গা সার্কিট হাউসের নয়।
সুতরাং, ফরিদপুরের ভাঙ্গা সার্কিট হাউসে ঘটনা দাবিতে নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে অগ্নিসংযোগের ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Press Trust of India – X Post
- Reuters – Young anti-corruption protesters oust Nepal PM Oli