জাকসু নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির দৃশ্য দাবিতে পুরোনো ও ভিন্ন ঘটনার ভিডিও প্রচার

গত ১১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচন। নির্বাচন চলাকালীন ফজিলাতুন্নেসা হল কেন্দ্রে অমোচনীয় কালি উঠে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়ায় কিছু সময়ের জন্যে ভোট গ্রহণ বন্ধ রাখা হয়। ভোটগ্রহণ বন্ধ রাখার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরবর্তীতে শিবিরের বিরুদ্ধে ওই কেন্দ্রে জাল ভোট প্রদানের অভিযোগও ওঠে। পরে বিকেল ৪ টার দিকে ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার আগেই নির্বাচনে ভোট জালিয়াতি ও কারচুপির অভিযোগসহ বেশকিছু অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জন করে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল। এর প্রেক্ষিতে ১১ সেপ্টেম্বর রাত থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসুবকে একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, এটি জাকসু নির্বাচনে জাল ভোট প্রদানের ভিডিও।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটি জাকসু নির্বাচনে জাল ভোট প্রদানের নয়। প্রকৃতপক্ষে, অন্তত ২০১৫ সালের চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সময় থেকে এই ভিডিওটি ইন্টারনেটে পাওয়া যাচ্ছে যার সাথে স্বাভাবিকভাবেই সাম্প্রতিক জাকসু নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই। 

আলোচিত দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে জাকসু নির্বাচনে জাল ভোট প্রদানের আসল ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে এটির কয়েকটি কী-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে Engr. Shamsul Islam Milon নামের একটি ফেসবুক পেজে ২০১৫ সালের ২৯ এপ্রিলে একই ভিডিওটি প্রচারিত হতে দেখা যায়। তবে ভিডিওটি কোন নির্বাচনে বা কোন অঞ্চলে জাল ভোট প্রদানের তা পোস্টটির কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। কিন্তু পোস্টটির শিরোনামে উল্লেখ করা হয়, ওই নির্বাচনের কমিশনার রাকিবুল নামের একজন ব্যক্তি ছিলেন।

Video Comparison by Rumor Scanner 

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকা এবং চট্রগ্রামে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। যা প্রাপ্ত ভিডিওটি প্রচারিত হওয়ার আগের দিন। এছাড়াও জানা যায়, উক্ত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রধান নিবার্চন কমিশনার ছিলেন কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ। যা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, আগের পোস্টটিতে ‘রাকিবুল’ নামটি দ্বারা কাজী রকিবউদ্দীনকে বোঝানো হয়েছে। 

পরবর্তীতে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Omar Farouqe নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টেও ২০১৫ সালের ২৯ এপ্রিল একই ভিডিওটি প্রচারিত হতে দেখা যায়। উক্ত ভিডিওর শিরোনামে বলা হয়, ভিডিওটি ২০১৫ সালের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের। এছাড়াও পোস্টকারী শিরোনামে জানান, ভিডিওটি তাদের সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির। 

Screenshot: Facebook 

পোস্টকারীর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট পর্যালোচনার মাধ্যমে দেখা যায়, পোস্টকারী কুমিল্লার হলেও তিনি চট্টগ্রামে বসবাস করেন। যেহেতু, ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সেহেতু  এটি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ভোট জালিয়াতির ভিডিও হতে পারে বলে ধারণা করা যায়। তবে ভিডিওটি এই ঘটনারই কিনা সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

Screenshot: Facebook 

ভিডিওটি ধারণের স্থান এবং সময়কাল সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে নিশ্চিত হওয়া না গেলেও এটা নিশ্চিত যে, এটি সাম্প্রতিক জাকসু নির্বাচনের নয়। 

সুতরাং, অন্তত ২০১৫ সাল থেকে ইন্টারনেটে বিদ্যমান একটি ভিডিওকে সাম্প্রতিক সময়ের জাকসু নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img