১৫ আগস্ট শোক দিবস পালন করায় তিন যুবলীগ কর্মীকে ‍কুপিয়ে হত্যার দাবিটি ভুয়া

গত ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে শোক দিবস পালন করায় কথিত মাদানীপুরে প্রকাশ্যে তিনজন যুবলীগ কর্মীকে ‍কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে দাবিতে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।  

ফেসবুকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৫ আগস্ট শোক দিবস পালন করায় দেশের কোনো স্থানে তিনজন যুবলীগ কর্মীকে কুপিয়ে হত্যার কোনো ঘটনা ঘটেনি। প্রকৃতপক্ষে, মাদারীপুরে বালুর ব্যবসা নিয়ে বিরোধের জেরে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাসহ তার দুই ভাইকে কুপিয়ে হত্যার পুরোনো ঘটনাকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

আলোচিত ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে এটির কয়েকটি কী-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম যমুনা টেলিভিশনের ইউটিউব চ্যানেলে গত ৮ মার্চ মাদারীপুরে বালু ব্যবসার দখল নিয়ে দুই ভাইকে কুপিয়ে হত্যা! শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

Video Comparison by Rumor Scanner 

প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এর ১৭ সেকেন্ড থেকে ৪৬ সেকেন্ড পর্যন্ত সময়ের ফুটেজের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর ফুটেজের হুবহু মিল রয়েছে। উভয় ভিডিওতে একইভাবে ভ্যানে করে লাশ বহন করতে দেখা যায়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, গত মার্চ মাসে মাদারীপুরে অবৈধ বালু ব্যবসার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আপন দুই ভাইসহ তিনজনকে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষরা। 

এছাড়াও প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, মূলত কীর্তিনাশা নদী থেকে বালুতলা নিয়ে খোয়াজপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল সরদারের সাথে স্থানীয় প্রভাবশালী শাহজাহান খানের বিরোধ দীর্ঘদিনের। এর জেড়ে সাইফুলের উপর চড়াও হয় শাহজাহানের সমর্থকরা। উদ্ধারে সাইফুলের ভাই প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসলে হামলার শিকার হন তারাও। ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান ও তার বড় ভাই আতাউর। হাসপাতালে নিলে আরো একজন মারা যান।

প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে গত ৮ মার্চ মাদারীপুরে বালুর ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্বে তিন ভাইকে কুপিয়ে হত্যা শিরোনামে একই ঘটনায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের সন্ধান পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, এটি প্রকাশের দিন অর্থাৎ, ৮ মার্চ মাদারীপুর সদর উপজেলার খোয়াজপুর ইউনিয়নের সরদার বাড়িতে উক্ত হামলার ঘটনা ঘটে। প্রতিপক্ষের হামলা থেকে বাঁচতে সাইফুল ও তাঁর আরও দুই ভাই বাড়ির সামনে একটি মসজিদে আশ্রয় নিলে হামলাকারীরা মসজিদে ঢুকে তিন ভাইকে কুপিয়ে জখম করেন। নিহতরা হলেন, আতাউর রহমান সরদার, সাইফুল ইসলাম ও তাঁদের চাচাতো ভাই পলাশ সরদার।

প্রতিবেদনটিতে মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর সাহার বরাতে উল্লেখ করা হয়, সাইফুল এর আগে ওই এলাকায় হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে দুই বালু ব্যবসায়ীর দুই পা ভেঙে দেন। এর জেরে ওই ব্যবসায়ীরা ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকারী লোকজন একত্র হয়ে সাইফুল ও তাঁর ভাইদের ওপর হামলা করেন।

আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলোতে মাদানীপুর উল্লেখ করা হলেও মূলত ভিডিওর হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে মাদারীপুরে। 

অর্থাৎ, মাদারীপুরে বালু ব্যবসা নিয়ে বিরোধের জেরে হওয়া হত্যাকাণ্ডের ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

সুতরাং, মাদারীপুরে বালু ব্যবসা নিয়ে বিরোধের জেরে হওয়া হত্যাকাণ্ডের পুরোনো ফুটেজকে ১৫ আগস্ট শোক দিবস পালন করায় প্রকাশ্যে তিনজন যুবলীগ কর্মীকে ‍কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img