সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবি প্রচার করা হয়েছে, “যে খবর বাংলাদেশের গণমাধ্যম এখনো প্রচার করে নাই। গতকাল ইউনূসের তিনজন উপদেষ্টা পদত্যাগ করেছেন। যারা পদত্যাগ করেছেন তারা হলেন – (১) শিক্ষা উপদেষ্টা – সি আর আবরার (২) প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা – অধ্যাপক ডা: বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার (৩) মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা – ফারুক-ই-আজম”

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, শিক্ষা উপদেষ্টা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টার পদত্যাগ করার দাবিটি সঠিক নয়৷ প্রকৃতপক্ষে কোনোরকম নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করলে তাতে প্রচারিত দাবিটির সপক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণের উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে মূলধারার গণমাধ্যম ‘বাংলা ট্রিবিউন’ এর ওয়েবসাইটে আজ (৩০ জুলাই) প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য শিক্ষক, বাবা ও মা অনেক পরিশ্রম করে থাকেন, তাই শিক্ষক, বাবা ও মাকে ফুল কিনে দিয়ে কৃতজ্ঞতা জানানোর জন্য ছাত্রছাত্রীদের অনুরোধ করেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার। মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের সম্মেলন কক্ষে ২০২২ ও ২০২৩ সালের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থীদের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।” অর্থাৎ, গতকালও (২৯ জুলাই) শিক্ষা উপদেষ্টা হিসেবে ড. সি আর আবরার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অপরদিকে আলোচিত দাবিটি এর প্রায় ৩ দিন আগে গত ২৬ জুলাই প্রচার করা হয়েছে।
এছাড়াও, অনুসন্ধানে সরকারি গণমাধ্যম ‘বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা’র ওয়েবসাইটে গত ২৮ জুলাইয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেছেন, প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষকদের পাশাপাশি অভিভাবকদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে। সোমবার (২৮ জুলাই) ঢাকার মোহাম্মদপুরের তাজমহল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘ঢাকা মহানগরী ও পূর্বাচলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন ও অবকাঠামো উন্নয়নসহ দৃষ্টিনন্দনকরণ প্রকল্পে’র আওতায় ৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তৃতাকালে তিনি এ কথা বলেন।” অর্থাৎ, আলোচিত দাবিটি প্রচারের প্রায় ২ দিন পর গত ২৮ জুলাইও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা হিসেবে অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টার বিষয়ে অনুসন্ধানে সরকারি গণমাধ্যম ‘বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা’র ওয়েবসাইটে গত ২৬ জুলাইয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীর প্রতীক বলেছেন, জুলাই যোদ্ধারা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের ইতিহাসের অংশ। বাংলাদেশ আজীবন তাদেরকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। এ দেশের সরকার ও জনগণ তাদের ত্যাগের মর্যাদাকে সমুন্নত রেখে সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করবে বলে আমার বিশ্বাস। আজ শনিবার (২৬ জুলাই) চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমি অডিটোরিয়ামে ‘ওয়ারিয়র্স অব জুলাই, চট্টগ্রাম’ আয়োজিত জুলাই বর্ষপূর্তি উদযাপন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং জুলাই শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধাদের সম্মাননা প্রদান ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এইসব কথা বলেন।” অর্থাৎ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা গত ২৫ জুলাইয়ে পদত্যাগ করেছেন বলা হলেও এর পরেরদিন গত ২৬ জুলাইয়েও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে ফারুক-ই-আজমকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়।
এছাড়া, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলেও মূলধারার গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে আলোচিত দাবিটির সপক্ষে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য যে, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত কিছু পোস্টে শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরারের ছবিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দারের ছবি দাবি করা হয়েছে। এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দারের ছবিকে শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরারের ছবি দাবি করা হয়েছে।
সুতরাং, শিক্ষা উপদেষ্টা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা সম্প্রতি পদত্যাগ করেছেন শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Bangla Tribune – শিক্ষক, মা-বাবাকে ফুল দিয়ে কৃতজ্ঞতা জানাতে ছাত্রছাত্রীদের অনুরোধ শিক্ষা উপদেষ্টার
- Bangladesh Sangbad Sangstha – শিক্ষার মানোন্নয়নে অভিভাবকদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে: প্রাথমিক শিক্ষা উপদেষ্টা
- Bangladesh Sangbad Sangstha – জুলাই যোদ্ধারা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের ইতিহাসের অংশ: মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা
- Rumor Scanner’s analysis