সম্প্রতি, বোরকা পরে পালিয়ে যাওয়ার সময় গ্রেপ্তার ছাত্রলীগ কর্মী – এই দাবিতে একটি ভিডিও গণমাধ্যমসহ ইন্টারনেটে ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়েছে।

গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজে প্রচারিত পোস্ট দেখুন: জনকন্ঠ, বৈশাখী টিভি।
এছাড়া, ইত্তেফাকও একই দাবিতে ভিডিওটি পোস্ট করে তা পরবর্তীতে সরিয়ে নেয়। তবে ইত্তেফাকের ভিডিওটি এর মধ্যেই ফেসবুকের বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে ছড়িয়ে পড়ে।
ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)
ইনস্টগ্রামে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, চেকপোস্টে বোরকা পরিহিত অবস্থায় পুলিশের হাতে আটক এই যুবক ছাত্রলীগ কর্মী নন। প্রকৃতপক্ষে, গত ২৩ জুলাই রাতে টেকনাফের হ্নীলার শালবাগান পুলিশ তল্লাশিচৌকিতে তল্লাশি কার্যক্রমের সময় এই যুবককে বোরকা পরিহিত অবস্থায় আটক করা হয়। আটক এই যুবক একজন রোহিঙ্গা শরনার্থী।
এই বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে গত ২৪ তারিখ ‘মাথায় হিজাব, গায়ে বোরকা, তল্লাশিতে ধরা পড়ল তিনি পুরুষ’ শিরোনামের একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ফিচার ইমেজের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর একটি নির্দিষ্ট ফ্রেমের মিল রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মাথায় কালো হিজাব, হাতে-পায়ে মোজা, গায়ে বোরকা—এমন বেশভূষায় থাকা এক যুবককে আটক করে পুলিশ। নজরদারি এড়িয়ে শিবির থেকে বেরিয়ে আবার ঢুকতে গিয়ে ধরা পড়েন তিনি। বুধবার [২৩ জুলাই] রাতে টেকনাফের হ্নীলার শালবাগান পুলিশ তল্লাশিচৌকিতে (চেকপোস্টে) ঘটে এ ঘটনা। নারীর ছদ্মবেশ ধরে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে ঢুকতে চেয়েছিলেন তিনি। ওই ব্যক্তি শিবিরেরই রোহিঙ্গা বাসিন্দা। নাম রশিদ আহমদ (২৭)। তিনি কক্সবাজারের টেকনাফের হ্নীলার ২৬ নম্বর রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের ফরিদ আহমেদের ছেলে।
প্রতিবেদনটিতে পুলিশ সূত্রে জানানো হয়, ওই রোহিঙ্গা যুবক আশ্রয়শিবির থেকে বের হয়ে কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করেছেন বলে পুলিশের সন্দেহ। এ কারণে আশ্রয়শিবির থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে বের হয়েছিলেন। আবার ছদ্মবেশ ধারণ করে আশ্রয়শিবিরে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন।
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, বোরকা পরা ওই যুবক পায়ে হেঁটেই তল্লাশিচৌকি পার হচ্ছিল। তাঁর হাঁটাচলা দেখে সন্দেহ হলে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তবে কথার ঠিকঠাকমতো উত্তর দিতে পারেনি। পরে তাঁকে আটক করা হয়। কী কারণে বোরকা পরে বের হয়েছিলেন, এসব বিষয়ে জানতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
এছাড়া, জাতীয় দৈনিক যুগান্তর, সমকাল এবং চট্টগ্রামের স্থানীয় গণমাধ্যম দৈনিক আজাদী এর ওয়েবসাইটে এই বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়।
এসকল প্রতিবেদনে এই যুবককে রোহিঙ্গা শরনার্থী বলেই উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনগুলোতে তার কোনো রাজনৈতিক পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি।
এই বিষয়ে আরও নিশ্চিত হতে টেকনাফের স্থানীয় সংবাদকর্মী ও টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) -এর সাথেও কথা বলে রিউমর স্ক্যানার টিম।
প্রথম আলোর টেকনাফ প্রতিনিধি গিয়াস উদ্দিন জানান, আটককৃত ব্যক্তি রোহিঙ্গা। তাঁর কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই।
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনও আটককৃত ব্যক্তি রোহিঙ্গা শরনার্থী বলে নিশ্চিত করেন।
সুতরাং, কক্সবাজারের টেকনাফে তল্লাশি কার্যক্রমের সময় বোরকা পড়ে নারী ছদ্মবেশে থাকা রোহিঙ্গা যুবক আটকের ঘটনাকে বোরকা পরে পালিয়ে যাওয়ার সময় ছাত্রলীগ কর্মীকে গ্রেফতার দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Prothom Alo : মাথায় হিজাব, গায়ে বোরকা, তল্লাশিতে ধরা পড়ল তিনি পুরুষ
- Jugantor : বোরকা পরে রোহিঙ্গা শিবিরে ঢুকতে গিয়ে যুবক আটক
- Dainik Azadi : হিজাব ও বোরকা পরে যাচ্ছিলেন রোহিঙ্গা শিবিরে রশিদ, অতঃপর ধরা
- Samakal : টেকনাফে বোরকা পরে ঘোরাফেরা, রোহিঙ্গা যুবক আটক
- Statement : Gias Uddin, Prothom Alo, Teknaf correspondent
- Statement : Muhammad Gias Uddin, Officers In-Charge, Teknaf Model Thana