সম্প্রতি, ‘অবৈধ ইউনুসের তথাকথিত নতুন বাংলাদেশ’ আসলে এক বিভীষিকার গণতন্ত্রবিনাশী রূপ। রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা ও ন্যায়ের বদলে এখানে পুলিশের সামনে সংঘবদ্ধ মব তৈরি করে মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। এটা শুধু আইনের শাসনের পরাজয় নয়, বরং একটি বর্বর ও নৈরাজ্যপূর্ণ সমাজব্যবস্থার নগ্ন প্রকাশ।’- শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, পুলিশ সদস্যদের সামনে একজনকে পেটাচ্ছেন একদল জনতা। পাশাপাশি, একজন নারীকে রক্ষা করতেও দেখা যায়।
ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
এক্সে (সাকেব টুইটার) প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, পুলিশ সদস্যদের সামনে প্রকাশ্যে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের কিংবা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলের নয় বরং, ভিডিওটি গত বছরের জানুয়ারি মাসের। এছাড়া, ভিডিওতে প্রদর্শিত আক্রমণের শিকার এই ব্যক্তি মারা যাননি। তিনি বেঁচে আছেন।
অনুসন্ধানে ‘ঐতিহ্যবাহী বরমী – Oitijjobahi Barmi’ নাৃক একটি ফেসবুক গ্রুপে ‘Romjan Ali Robel’ নামক একটি অ্যাকাউন্ট থেকে গত বছরের ১৬ জানুয়ারি প্রচারিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টে থাকা ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওর মিল রয়েছে।
উক্ত পোস্টে দাবি করা হয়েছে, ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার গয়েশপুর গ্রামের এক মর্মান্তিক ঘটনা! আগে খুনি একজন হোমিও প্যাথি ডাক্তারকে প্রকাশ্য কুপিয়ে হত্যা করে তারপর একজন খুনিকে জনগণের গণপিটুনি থেকে বাচাতে অবুঝ মায়ের আর্তনাদ।
‘Romjan Ali Robel’ নামক অ্যাকাউন্টি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, তিনি ময়মনসিংহের একজন স্থানীয় সাংবাদিক।
পোস্টের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ২০২৪ সালের ১৫ জানুয়ারি প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে “গফরগাঁওয়ে বিএনপি নেতাকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা”- শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, “গত বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি দুপুরে ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার পাইথল ইউনিয়নের গয়েশপুর বাজারে হারুন অর রশিদ (৫৫) নামের এক বিএনপি নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার পরপরই এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে রুবেল মিয়া নামের এক ব্যক্তিকে স্থানীয় লোকজন ধরে পিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে। অভিযুক্ত রুবেল মিয়া একই ইউনিয়নের নেওকা গ্রামের বাসিন্দা।”
এছাড়া একই বিষয়ে সেসময় মানবজমিনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়।
অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং ভিডিওতে মারধরের শিকার হওয়া ব্যক্তি বেঁচে আছেন।
সুতরাং, গত বছরের জানুয়ারি মাসে ময়মনসিংহে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে এক ব্যক্তিকে গণপিটুনির দৃশ্যকে সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশের সামনে এক ব্যক্তিকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Romjan Ali Robel- Facebook Post
- Prothom Alo- গফরগাঁওয়ে বিএনপি নেতাকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা
- Manabzamin- প্রকাশ্যে বিএনপি নেতাকে গলা কেটে খুন
