ড. ইউনূস সজীব ওয়াজেদ জয়ের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি  

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ০৫ আগস্ট শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা হারানোর পর গত ০৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। এরই মাঝে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার সাংবিধানিক ক্ষমতা বলে গত ০৬ আগস্ট দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়েছিলেন। এরপর থেকেই নানা সময়ে সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে নানারকম আলোচনা, মতামত নিয়মিতভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হয়ে আসছে। এসবেরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি ‘শেখ হাসিনা নয় ডিসেম্বরে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে জয়: ড. ইউনূস’ শীর্ষক দাবিতে শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম টিকটকে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে৷ প্রচারিত ভিডিওটিতে বলা হয়েছে, গত ১৭ নভেম্বর জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ প্রদানের পর সিএ প্রেস উইংকে দেওয়া বিবৃতিতে প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন, “শেখ হাসিনা নয়, চাইলে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়।” সেই সাথে তিনি আরো জানিয়েছেন কীভাবে এবং কোন নিয়মে ফিরতে পারবেন জয়। ভিডিওতে আরো বলা হয়েছে, সিএ প্রেস উইং জানিয়েছে, “শেখ হাসিনার নামে মামলা আছে ভূরি ভূরি৷ তবে শেখ হাসিনার নামে মামলার পাহাড় থাকলেও মামলা নেই পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের ঝুলিতে৷ যেহেতু নির্বাচন দিলে আওয়ামী লীগ নির্দ্বিধায় অংশ নিতে পারবে, সেহেতু শেখ হাসিনা নির্বাচনে অংশ নিতে না পারলেও ইচ্ছা থাকলে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে আওয়ামী লীগের সাবেক তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। সে সাথে জনগণ চাইলে খুব দ্রুতই দেশে ফিরতে পারবেন তিনি।”

উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি ৭০ হাজারেরও অধিক বার দেখা হয়েছে এবং প্রায় ২ হাজারেরও অধিক পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটিতে লাইক দেওয়া হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমার স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘শেখ হাসিনা নয় ডিসেম্বরে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে জয়’ শীর্ষক কোনো মন্তব্য ড. ইউনূস করেননি। প্রচারিত ভিডিওটিতেও ড. ইউনূস নির্বাচন ও সংস্কার নিয়ে নানা মন্তব্য করলেও আলোচিত দাবিতে কোনো মন্তব্য করেননি। তাছাড়া, নির্বাচন কবে নাগাদ হবে তাও এখনও নিশ্চিত নয়।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যম কালবেলার ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৭ নভেম্বরে প্রকাশিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। “কয়েক দিনের মধ্যেই নির্বাচন কমিশন গঠন: ড. ইউনূস” শিরোনামে প্রকাশিত উক্ত ভিডিওটিতে ড. ইউনূসের দেওয়া বক্তব্যসহ প্রচারিত ভিডিওটির ফ্রেমের সাদৃশ্য পাওয়া যায়; যা থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, প্রচারিত ভিডিওটি মূলত কালবেলায় প্রকাশিত উক্ত ভিডিওটি থেকে নেওয়া হয়েছে।

Comparison: Rumor Scanner 

কালবেলায় প্রকাশিত উক্ত ভিডিওটিতে ড. ইউনূসকে বলতে শোনা যায়, আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে এবং তারপরেই নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হবে। এক্ষেত্রে সমস্ত দায়িত্ব কমিশনই দেখভাল করবে। কমিশন ভোটার তালিকা হালনাগাদসহ অবাধ নির্বাচনের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত বিষয় নিয়ে কাজ করবে৷ প্রবাসী বাংলাদেশিরা যাতে প্রথমবারের মতো পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন সে লক্ষ্যেও সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছেন ড. ইউনূস৷ পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্কার নিয়েও কথা বলেন তিনি এবং জনগণকেও এসব বিষয়ে মতামত দেওয়ার আহ্বান জানান। তবে, উক্ত ভিডিওতে “শেখ হাসিনা নয় ডিসেম্বরে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে জয়” শীর্ষক কোনো মন্তব্য ড. ইউনূসকে করতে দেখা যায়নি।

এরই সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে জার্মান ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের বাংলা বিভাগে “কয়েকদিনের মধ্যে ইসি গঠন, তারপরেই প্রস্তুতি: ড. ইউনূস” শিরোনামে গত ১৭ নভেম্বরে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষ্যে জাতির উদ্দেশে ভাষণে উপরোল্লিখিত বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টা৷ ভাষণে তিনি ১০০ দিনে সরকারের নেওয়া নানা উদ্যোগের পাশাপাশি ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেছেন৷ এছাড়াও প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, সংস্কার কমিশনগুলো তাদের সুপারিশ ডিসেম্বর-জানুয়ারির মধ্যেই সরকারের কাছে পেশ করবে৷ তাদের সুপারিশ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকার আলোচনায় বসবে৷ সবার ঐকমত্যের ভিত্তিতেই সংস্কার প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হবে৷ তবে সংস্কার চূড়ান্ত করার জন্য নির্বাচন কয়েক মাস বিলম্বিতও করা হতে পারে, এমন আভাস দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা৷ এ বিষয়ে ধৈর্য্য ধরার জন্য জনগণকে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি৷ এছাড়াও আরো নানা বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা নানা তথ্য দিয়েছেন৷ তবে কোথাও আলোচিত দাবিটির কোনো উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

পাশাপাশি, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করেও আলোচিত দাবিটির পক্ষে নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে অধিকতর নিশ্চিত হতে রিউমর স্ক্যানার টিম যোগাযোগ করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের সাথে। প্রেস উইং থেকে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করা হয়, আলোচিত দাবিটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এমন কোনো মন্তব্য করেননি৷ 

সুতরাং, ড. ইউনূস সজীব ওয়াজেদ জয়ের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে মন্তব্য করেছেন শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img