পুরুষের অণ্ডকোষের দাম ৩০ বা ৫০ হাজার ডলার নয় 

গত কয়েক বছর ধরে পুরুষের অণ্ডকোষ বিক্রির বিষয়ে অনলাইনে নানান তথ্য ছড়াতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। দাবি করা হয়, পুরুষের একটি অণ্ডকোষ বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ পাওয়া যায়। এই দাবিতে প্রচারিত জনপ্রিয় দুটি মূল্য হলো ৩০ হাজার ডলার এবং ৫০ হাজার ডলার। তবে এই দুই মূল্যের পাশাপাশি অন্যান্য ভিন্ন ভিন্ন মূল্যেরও প্রচলন রয়েছে। 

অণ্ডকোষের দাম

সম্প্রতি মানবতার আড়ালে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার মিল্টন সমাদ্দার (আর্কাইভ) তার গ্রেফতারের হওয়ার পূর্বে এক গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পুরুষের অণ্ডকোষ ৫০ লক্ষ টাকায় বিক্রি করা যায় বলে তিনি শুনেছেন বলে দাবি করেন।

সম্প্রতি এসব দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

একটি অণ্ডকোষের মূল্য ৩০ হাজার ডলার দাবিতে বিগত বছরগুলোতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন ২০১৯ (আর্কাইভ), ২০২০ (আর্কাইভ), ২০২১ (আর্কাইভ), ২০২২ (আর্কাইভ) এবং ২০২৩ (আর্কাইভ)।

৫০ হাজার ডলার দাবিতে বিগত বছরগুলোতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন ২০২০ (আর্কাইভ), ২০২১ (আর্কাইভ), ২০২২ (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, পুরুষের অণ্ডকোষের মূল্য ৩০ বা ৫০ হাজার ডলার শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয় বরং বিশ্বের অধিকাংশ দেশে অঙ্গ বিক্রি করা অবৈধ। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ীও অঙ্গ বিক্রি বা ক্রয় করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

আলোচ্য দাবিতে প্রচারিত কিছু ইংরেজি ভাষার পোস্টের সূত্র হিসেবে মার্ক পার্সি নামের এক আমেরিকান বাসিন্দার গল্প প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। 

সেই সূত্রে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, ব্রিটিশ অনলাইন গণমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট এর ওয়েবসাইটে ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ‘Las Vegas man ‘excited’ to sell testicle for $35,000 as part of medical trial’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

এই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মার্ক পারিসি নামের আমেরিকার এক বাসিন্দা আমেরিকার টিএলসি টিভি চ্যানেলের একটি পোগ্রামে বলেছিলেন, তিনি একটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অংশ হিসেবে তার একটি অণ্ডকোষ ৩৫ হাজার ডলারে বিক্রি করতে চলেছেন। এই প্রক্রিয়ায় তার জৈবিক অণ্ডকোষের পরিবর্তে একটি কৃত্রিম অণ্ডকোষ প্রতিস্থাপন করতে হবে।

আমেরিকা ভিত্তিক মেল ম্যাগাজিনের ওয়েবসাইটে ২০১৯ সালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মার্ক পারিসির অণ্ডকোষ বিক্রির চেষ্টা সফল হয়নি কারণ উক্ত ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য পর্যাপ্ত অংশগ্রহণকারী ছিল না এবং তার নিম্ন টেস্টোস্টেরনের জন্য তিনি এই ট্রায়ালের জন্য যোগ্য ছিলেন না।

পরবর্তীতে টিএলসি টিভি চ্যানেলের ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির শেষের দিকে ওই মুহূর্তটি দেখা যায় যখন মার্ক পারিসি জানতে পারেন তিনি আলোচ্য গবেষণায় অংশগ্রহণের যোগ্য নন।

অর্থাৎ, মার্ক পারিসি নামের আমেরিকার এক বাসিন্দা ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য ৩০ হাজার ডলারের বিনিময়ে তার অণ্ডকোষ বিক্রি করতে চেয়েছিলেন। এই পক্রিয়ায় তার জৈবিক অণ্ডকোষের পরিবর্তে একটি কৃত্রিম অণ্ডকোষ প্রতিস্থাপন করার কথা ছিল। যদিও পরবর্তীতে পর্যাপ্ত অংশগ্রহণকারী না থাকা এবং নিম্ন টেস্টোস্টেরনের জন্য তিনি এই কাজে সফল হয়নি।

যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক স্বাস্থ্য বিষয়ক ওয়েবসাইট হেলথলাইনে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে অণ্ডকোষ বিক্রির বিষয়ে জানানো হয়েছে, অণ্ডকোষের দান বিরল। বিজ্ঞানীরা অণ্ডকোষ সম্পর্কে যথেষ্ট অবগত এবং এর চাহিদা গবেষকদের মধ্যে কম। নৈতিক কারণে দান করা অণ্ডকোষ অন্য মানুষের শরীরে ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা হয় না এবং মানুষের মধ্যে অণ্ডকোষের ট্রান্সপ্ল্যান্ট খুবই কম ঘটে। অনলাইনে অণ্ডকোষ বিক্রি করে বড় অঙ্কের টাকা পাওয়ার দাবি করা হলেও এগুলি বেশিরভাগই মিথ্যা। যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসা উদ্দেশ্যে কোনো অঙ্গ বিক্রি আইনগতভাবে নিষিদ্ধ।

একই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা স্নোপসে প্রকাশিত একটি ফ্যাক্ট-চেক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অণ্ডকোষ দানের বিপরীতে বিপুর পরিমাণ অর্থ পাওয়ার বিষয়টি মিথ্যা। ১৯৮৪ সালের যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গ প্রতিস্থাপন আইন অনুযায়ী কোনো অঙ্গ বিক্রি করা আইনত নিষিদ্ধ।

স্নোপসের এই প্রতিবেদনে উল্লিখিত মার্ক পারিসির ঘটনাটি উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এই ঘটনাটি প্রায়ই অণ্ডকোষ দান করে টাকা পায় দাবিতে ছড়ানো গুজবের উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের অঙ্গ প্রতিস্থাপন আইন ১৯৯৯ অনুযায়ীও বাংলাদেশে অঙ্গ বিক্রি বা ক্রয় করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

এমনকি ওপেন সোর্স অনুসন্ধানে জানা যায় বিশ্বের অধিকাংশ দেশে অঙ্গ বিক্রি করা অবৈধ

মূলত, গত কয়েক বছর ধরে পুরুষের অণ্ডকোষের মূল্য ৩০ বা ৫০ ডলার হাজার দাবিতে একটি তথ্য ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, অণ্ডকোষের দান বিরল ঘটনা। বিজ্ঞানীরা অণ্ডকোষ সম্পর্কে যথেষ্ট অবগত এবং এর চাহিদা গবেষকদের মধ্যেও কম। এছাড়া বিশ্বের অধিকাংশ দেশে অঙ্গ বিক্রি করা অবৈধ। বাংলাদেশের অঙ্গ প্রতিস্থাপন আইন ১৯৯৯ অনুযায়ীও অঙ্গ বিক্রি বা ক্রয় করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

সুতরাং, পুরুষের অণ্ডকোষের মূল্য ৩০ হাজার বা ৫০ হাজার ডলার দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যগুলো মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img