বাংলাদেশে টিকটক নিষিদ্ধ করা হচ্ছে জানিয়ে সম্প্রতি সরকার কোনো ঘোষণা দেয়নি 

সম্প্রতি, ‘বাংলাদেশ থেকে চিরতরে ব্যান করা হচ্ছে জনপ্রিয় “TikTok’’জানালেন বাংলাদেশ শিক্ষা বোর্ড’ শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউব এবং শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকে প্রচার করা হচ্ছে।

টিকটক নিষিদ্ধ

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন  এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে চিরতরে শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটক নিষিদ্ধ করা হচ্ছে বলে সম্প্রতি সরকার কোনো ঘোষণা দেয়নি এবং ‘বাংলাদেশ শিক্ষাবোর্ড’ নামেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে কোন দপ্তর সংস্থার ফেসবুক আইডি বা পেজ নেই বরং ২০২০ সালে চীনের সাথে বিরোধের জেরে ভারতে চীনা অ্যাপ টিকটক নিষিদ্ধ করার বিষয়টিকেই উক্ত পেজের বরাতে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে টিকটক নিষিদ্ধ হচ্ছে দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।

গুজবের সূত্রপাত

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা, অধিকাংশ পোস্টেই তথ্যসূত্র হিসেবে ‘বাংলাদেশ শিক্ষা বোর্ড’ নামের একটি পেজের উল্লেখ করা হয়েছে। পরবর্তীতে কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে উক্ত পেজটির সন্ধান পায় রিউমর স্ক্যানার টিম। পেজটিতে গত ১৭ জানুয়ারি প্রকাশিত এ সম্পর্কিত পোস্টটি (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Facebook Post

উক্ত পোস্টটির মন্তব্যঘর পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, সেখানে পেজটি’র পক্ষ থেকে টিকটক ব্যান করার উক্ত বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, “টিকটক-সহ ৫৯টি চিনা অ্যাপের ব্যবহার চিরতরে বন্ধ হতে যাচ্ছে দেশে। টিকটক-সহ (Tiktok) ৫৯টি চিনা মোবাইল অ্যাপ পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্রীয় সরকার। গত বছর ১৫ জুন গালওয়ান ভ্যালিতে ভারত-চিন সীমান্ত সংঘর্ষে ভারতের ২০ জন সেনা শহিদ হন। চিন দাবি করে তাদের সেনা হতাহতের সংখ্যা ২০’র কম। তবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) জানিয়েছিলেন, চিনা সেনা ভারত ভূখণ্ডে ঢুকতে পারেনি। ইন্দো-চিন সীমান্তে সংঘর্ষের কোপ এসে পড়ে।”

Screenshot: Facebook Comment

এবিষয়ে অনুসন্ধানে ২০২০ সালের ৩০ জুন দেশীয় মূলধারার গণমাধ্যম The Business Standard এর ওয়েবসাইটে ‘টিকটকসহ ৫৯টি চীনা অ্যাপকে নিষিদ্ধ করল ভারত’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২০ সালে ভারতীয় সাইবার সুরক্ষা ও সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করার লক্ষ্যে টিকটক, ইউসি ব্রাউসার, হ্যালোসহ ৫৯টি চীনা মোবাইল অ্যাপ নিষিদ্ধ করে ভারত। সেবছরের ১৫ জুন ভারত ও চীনের সীমানা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরির কারণে চীনের বিভিন্ন ধরনের পণ্য নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নেয় ভারত। এরই ধারাবাহিকতায় এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম BBC এর ওয়েবসাইটে ২০২০ সালের ২৯ জুন ‘India bans TikTok, WeChat and dozens more Chinese apps’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে থেকে একই তথ্য জানা যায়।

অর্থাৎ, টিকটক নিষিদ্ধ হওয়ার উক্ত ঘটনাটি বাংলাদেশের নয় বরং ভারতের।

এছাড়াও অনুসন্ধানে বাংলাদেশের গণমাধ্যম, শিক্ষা মন্ত্রণালয় কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে টিকটক নিষিদ্ধ হচ্ছে শীর্ষক ঘোষণা সম্পর্কিত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

তাছাড়া বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে গত ১৮ জানুয়ারি প্রকাশিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Ministry of Education, Bangladesh

উক্ত পোস্টে বলা হয়, “বাংলাদেশ শিক্ষা বোর্ড” নামে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন কোন দপ্তর সংস্থার ফেইসবুক আইডি বা পেইজ নেই।”

অর্থাৎ, ‘বাংলাদেশ শিক্ষা বোর্ড’ নামের যে পেজটি থেকে উক্ত ঘটনাটি ফেসবুকে ছড়িয়েছিলো সেটি কোনো অফিশিয়াল পেজ নয়।

উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের বা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো দপ্তরের পক্ষ থেকে টিকটক নিষিদ্ধ হচ্ছে বলে কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি।

মূলত, ২০২০ সালের জুনে চীনের সাথে ভারতের সীমান্ত বিরোধের জেরে সাইবার সুরক্ষার কারণ দেখিয়ে ভারতে টিকটকসহ কয়েকটি চীনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করা হয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ফেসবুকে ‘বাংলাদেশ শিক্ষা বোর্ড’ নামের কথিত একটি পেজের বরাতে বাংলাদেশে টিকটক নিষিদ্ধ হচ্ছে দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে। উক্ত পেজটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ভারতের টিকটক নিষিদ্ধের পুরোনো বিষয়টি তারা বাংলাদেশ দাবিতে প্রচার করেছে। প্রকৃতপক্ষে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে টিকটক নিষিদ্ধ হচ্ছে বলে কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে তৎকালীন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার টিকটক নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নেওয়ার কথা বললেও পরবর্তীতে সেটি বাস্তবায়িত হয়নি। 

সুতরাং, ‘বাংলাদেশ শিক্ষা বোর্ড’ নামের একটি ফেসবুক পেজের বরাতে ‘বাংলাদেশ থেকে টিকটক নিষিদ্ধ করা হচ্ছে’ শীর্ষক দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img