স্টেশনের নাম নয়, হলি আর্টিজানে নিহত জাপানিদের স্মরণে মেট্রোরেল স্টেশনে নামফলক বসবে

সম্প্রতি “হলি আর্টিজানে নিহতদের নামে মেট্রোরেলের স্টেশনের নামকরণ হবে” শীর্ষক মন্তব্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করেছেন দাবিতে গণমাধ্যম ও ফেসবুকে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

গণমাধ্যম প্রচারিত এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন ইনডিপেনডেন্ট টিভি, সাম্প্রতিক দেশকাল, একাত্তর টিভি, বায়ান্ন টিভি

ফেসবুকে প্রচারিত এরকম কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী এমন মন্তব্য করেননি বরং নিহত জাপানি কর্মকর্তাদের স্মরণে কয়েকটি স্টেশনে তাদের নামফলক রাখা হবে বলে জানান তিনি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে রাজধানীর গুলশানের হলি আটিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় সাত জাপানি প্রকৌশলী নিহত হন। তারা মেট্রোরেলের সমীক্ষা কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। 

গত ২৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেলের প্রথম পর্যায়ে উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর একটি বক্তব্য নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে গণমাধ্যম ও ফেসবুকে। গণমাধ্যমের কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, হলি আর্টিজানে নিহতদের নামে মেট্রোরেলের স্টেশনের নামকরণ হবে।” 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ‘দৈনিক বাংলা’ পত্রিকার ওয়েবসাইটে গত ২৮ ডিসেম্বর “জঙ্গি হামলায় নিহত জাপানিদের নাম স্টেশনে থাকবে : প্রধানমন্ত্রী” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, “হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় নিহত জাপানি ৭ নাগরিকদের স্মরণে মেট্রোরেলের স্টেশনে তাদের নামফলক থাকবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার উত্তরায় মেট্রোরেলের উদ্বোধীন অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা এ কথা জানান।” 

পরবর্তীতে উক্ত অনুষ্ঠানের সরাসরি সম্প্রচারিত ভিডিও ‘বাংলাদেশ টেলিভিশন’ এর ইউটিউব চ্যানেলে খুঁজে পাওয়া যায়।  

ভিডিওর ১:৩৭:৪০ ঘন্টা সময় থেকে প্রধানমন্ত্রীর আলোচিত বক্তব্যটি খুঁজে পাওয়া যায়। 

তিনি বলেন, “আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমাদের মেট্রোরেলের কয়েকটি স্টেশন তাদের (হলি আর্টিজানে নিহত জাপানি নাগরিক) নামফলক রাখবো। তাদের নামফলক উত্তরা দিয়াবাড়ি মেট্রোরেল প্রদর্শনী ও তথ্যকেন্দ্রে স্মৃতিস্মারক স্থাপন করেছি। তাদের নামটি যেন স্মরণ থাকে আমরা সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

অর্থাৎ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে নিহত জাপানি কর্মকর্তাদের স্মরণে কয়েকটি স্টেশনে তাদের নামফলক রাখা হবে বলে জানিয়েছেন। 

মূলত, ২০১৬ সালে গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে সংঘটিত জঙ্গি হামলায় মেট্রোরেল প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ৭ জাপানি নাগরিক প্রাণ হারান। তাদের স্মরণে সকল নিহতদের পরিবারের সম্মতিক্রমে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মেট্রোরেল স্টেশনগুলোর নামকরণ নিহতদের নামে করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তবে পরবর্তীতে ফার্মগেট স্টেশনে তাদের ভাস্কর্য নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। আর আজ মেট্রোরেলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের মেট্রোরেলের কয়েকটি স্টেশনে আমরা তাদের (হলি আর্টিজানে হামলায় নিহতদের) নামফলক রাখবো।” কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যকে গণমাধ্যম ও ফেসবুকে “হলি আর্টিজানে নিহতদের নামে মেট্রোরেলের স্টেশন হবে” দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোঃ শাহরিয়ার আলম গতকাল (২৮ ডিসেম্বর) এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে (আর্কাইভ) জানান, “প্রস্তাব করেছিলাম হোলি আর্টিজানের জাপানিজ ভিক্টিমদের নামে স্টেশনগুলোর নামকরণ করতে। সব পরিবারের সম্মতির প্রয়োজন ছিলো। পরে সিধান্ত হয়েছে ফার্মগেট স্টেশনে তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ভাস্কর্য নির্মাণের।

প্রসঙ্গত, মেট্রোরেল প্রকল্পের একটি অংশ উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১.৭৩ কিলোমিটার পথ চলাচলের জন্য ২৯ ডিসেম্বর খুলে দেওয়া হয়েছে। 

সুতরাং, ‘হলি আর্টিজানে নিহত জাপানি কর্মকর্তাদের স্মরণে মেট্রোরেলের কয়েকটি স্টেশনে তাদের নামফলক স্থাপন করা হবে’ শীর্ষক প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে ‘হলি আর্টিজানে নিহতদের নামে মেট্রোরেলের স্টেশনের নামকরণ করা হবে’ শীর্ষক দাবিতে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img