জাকসু নির্বাচনে ভোট চুরির সিসিটিভি ফুটেজ ফাঁস হাওয়ার দাবিটি মিথ্যা, সেনাপ্রধানও এই নির্বাচন অবৈধ ঘোষণা করেননি

গত ১১ সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনে অনিয়ম, ভোট কারচুপি ও প্রশাসনের পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে ওইদিন বেলা সাড়ে ৩টার দিকে ভোট শেষ হওয়ার দেড় ঘণ্টা আগে নির্বাচন বর্জন করে ছাত্রদল। জাকসু নির্বাচনে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রশিদ জিতু ও সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ছাত্র শিবির সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের মাজহারুল ইসলাম জয়ী হয়েছেন। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি অনলাইনে কথিত একটি সংবাদ ভিডিও প্রচার করে থাম্বনেল ও ক্যাপশনে দাবি করা হয়েছে, “জাকসু নির্বাচনে শিবিরের ভোট চুরির সিসিটিভি ফুটেজ ফাঁস | জাকসু নির্বাচনকে অবৈধ ঘোষণা দিলেন সেনাপ্রধান”।

এরূপ দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, জাকসু নির্বাচনে শিবিরের ভোট চুরির সিসিটিভি ফুটেজ ফাঁস হওয়ার ও জাকসু নির্বাচনকে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের অবৈধ ঘোষণা করার দাবিগুলো সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে কোনোরকম নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই জাকসু সম্পর্কিত ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ফুটেজ সংযুক্ত করে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত কথিত সংবাদ প্রতিবেদনের পুরো ভিডিও পর্যবেক্ষণ করলে তাতে জাকসু নির্বাচনে শিবিরের ভোট চুরির সিসিটিভি ফুটেজ ফাঁস বা জাকসু নির্বাচনকে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের অবৈধ ঘোষণা করার দাবির সপক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণের উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

কথিত ভিডিও প্রতিবেদনের শুরুতে দেখানো ফুটেজে মূলধারার সংবাদমাধ্যম ‘যুগান্তর’ এর লোগোর সংযুক্তিসহ একটি ফুটেজ দেখা যায়৷ ফুটেজে বলা হয়, “জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ এনে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল। তাদের দাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন জামায়াত ইসলামের আঁতাত করে শিবির সমর্থিত প্যানেলকে জেতানোর চেষ্টা করছে।”

এই সূত্র ধরে অনুসন্ধানে ‘যুগান্তর’ এর ইউটিউব চ্যানেলে ‘যে কারণে জাকসু নির্বাচন বর্জন করল ছাত্রদল’ শিরোনামে গত ১১ সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনের শুরুর অংশের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফুটেজের তুলনা করলে হুবহু মিল পাওয়া যায় এবং নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত ফুটেজটি মূলত উক্ত ভিডিওটি থেকে নেওয়া হয়েছে।

Comparison : Rumor Scanner

যুগান্তরের ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে তাতে আরো বলতে শোনা যায়, ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার প্রায় এক ঘণ্টা আগেই বিকেল পৌনে ৪ টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলন ডেকে নির্বাচন বর্জনের কথা জানান ছাত্রদল সমর্থিত জিএস প্রার্থী তানজিলা হোসাইন বৈশাখী। এছাড়াও ভিডিওটিতে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়, তবে কোথাও জাকসু নির্বাচনে শিবিরের ভোট চুরির সিসিটিভি ফুটেজ ফাঁস বা জাকসু নির্বাচনকে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের অবৈধ ঘোষণা করার দাবির উল্লেখ বা দাবির সপক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।

প্রচারিত কথিত সংবাদ প্রতিবেদনে এর পরবর্তী ফুটেজে মূলধারার গণমাধ্যম ‘নিউজ২৪’ এর লোগো সম্বলিত ফুটেজে একজন নারীকে বলতে শোনা যায়, “আমরা যারা দায়িত্বে আছি যে শিক্ষকরা আমরা এই নির্বাচন বর্জন করছি”। উক্ত ফুটেজের সূত্রের বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘নিউজ২৪’ এর ইউটিউব চ্যানেলে ‘জাকসু নির্বাচনে ভোট কার’চুপিসহ নানা অভি’যোগ তুলে ভোটকেন্দ্র ছেড়ে গেছেন দায়িত্বরত শিক্ষকরা’ শিরোনামে গত ১১ সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।

Comparison : Rumor Scanner

প্রতিবেদনে উক্ত নারী শিক্ষিকাকে আলোচিত বাক্যটি বলতে শোনা যায় এবং এর আগে তাকে আরো বলতে শোনা যায়, ‘এই দায়িত্বে থাকা মানে আমরা মনে করি নিজেদের কাছে নিজেদের জবাবদিহিতা নাই। আমরা যদি এই নির্বাচনে এইরকম প্রহসন দেখে এই নির্বাচনের সাথে আমরা থাকি তাহলে কোনোভাবেই আমার নিজের কাছে আমার বিবেকের কাছে আমি ই করতে পারবো না। এজন্য আমরা যারা দায়িত্বে আছি যে শিক্ষকরা আমরা এই নির্বাচন বর্জন করছি।” এছাড়াও ভিডিওটিতে নির্বাচনে নানারকমের কারচুপির অভিযোগ করতে শোনা যায়। তবে কোথাও জাকসু নির্বাচনে শিবিরের ভোট চুরির সিসিটিভি ফুটেজ ফাঁস বা জাকসু নির্বাচনকে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের অবৈধ ঘোষণা করার দাবির উল্লেখ বা দাবির সপক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।

এছাড়াও, প্রচারিত কথিত সংবাদ প্রতিবেদনে মূলধারার গণমাধ্যম ‘যমুনা টিভি’ টিভির লোগো সম্বলিত ফুটেজে ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী তানজিলা হোসেন বৈশাখীর বক্তব্যের সংযুক্তিও পাওয়া যায়। এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘যমুনা টিভি’র ইউটিউব চ্যানেলে ‘জাকসু নির্বাচন বর্জন করলো ছাত্রদল প্যানেল’ শিরোনামে গত ১১ সেপ্টেম্বরে বৈশাখীর বক্তব্যের ভিডিওটি প্রচার হতে দেখা যায়।

Comparison : Rumor Scanner

ভিডিওতে বৈশাখীর বক্তব্যে তিনি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন এবং নির্বাচন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলেন। তবে উক্ত ভিডিওটিরও কোথাও জাকসু নির্বাচনে শিবিরের ভোট চুরির সিসিটিভি ফুটেজ ফাঁস বা জাকসু নির্বাচনকে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের অবৈধ ঘোষণা করার দাবির সপক্ষে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। 

উল্লেখ্য, প্রচারিত কথিত সংবাদ প্রতিবেদনে আরো কিছু ফুটেজেরও সংযুক্তি পাওয়া যায় তবে কোথাও আলোচিত দাবির কোনো উল্লেখ পাওয়া যায়নি। এছাড়াও, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলেও আলোচিত দাবির সপক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, জাকসু নির্বাচনে শিবিরের ভোট চুরির সিসিটিভি ফুটেজ ফাঁস হয়েছে ও জাকসু নির্বাচনকে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান অবৈধ ঘোষণা করেছেন শীর্ষক দাবি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img