হাসনাত আবদুল্লাহ গ্রেফতারের ভুয়া দাবিতে পুরোনো ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার অপ্রাসঙ্গিক ভিডিও প্রচার 

গত ১৫ সেপ্টেম্বর জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহকে গ্রেফতার করেছে সেনাবাহিনী দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। 

উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, হাসনাত আবদুল্লাহ গ্রেফতার হননি এবং তার বাসা থেকে সাত বস্তা টাকা উদ্ধারের কোনো ঘটনাও ঘটেনি। প্রকৃতপক্ষে, জেনেভা ক্যাম্পে মাদক বিক্রির চার বস্তা টাকা উদ্ধারের ঘটনাসহ বিভিন্ন ঘটনার একাধিক ভিডিওকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

ভিডিও যাচাই ১

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘FA.Future creation’ নামক ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর “গাড়ি নিয়ে মুখ খুললেন হাসনাত আবদুল্লাহ । Hasnat Abdullah” শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর ৯ সেকেন্ড থেকে ১৮ সেকেন্ড ও ৩৪ সেকেন্ড অংশ থেকে ৪৫ সেকেন্ড অংশের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল রয়েছে। তবে ভিডিওটি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানা যায়নি।

Comparison: Rumor Scanner 

অর্থাৎ, ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়। 

ভিডিও যাচাই ২

ভিডিওর পরবর্তী অংশে থাকা ফুটেজটির রিভার্স সার্চ করে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম সময় টিভির ইউটিউব চ্যানেলে গত ৫ জুন “জেনেভা ক্যাম্পে মাদক কারবারে ওষুধের দোকানে মিলল ৩ বস্তা টাকা” শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত অংশের ভিডিওর প্রচারিত ভিডিওর সামঞ্জস্য পাওয়া যায় ।  

Comparison: Rumor Scanner (প্রথম দৃশ্য)

পরবর্তীতে, জাতীয় দৈনিক কালের কণ্ঠের ইউটিউব চ্যানেলে গত ৫ জুন ‘মা/দ/ক বিক্রির চার বস্তা টাকাসহ একজনকে আ/ট/ক করলো যৌথ বাহিনী’ শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে প্রচারিত ভিডিওর মিল রয়েছে। 

Comparison: Rumor Scanner (দ্বিতীয় দৃশ্য)

অনলাইন গণমাধ্যম ঢাকা পোস্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, “৪ জুন রাতে সেনাবাহিনী ও র‌্যাব-২ যৌথভাবে মোহাম্মদপুরের হুমায়ুন রোড এলাকায় অবস্থিত বিহারি ক্যাম্পে এই অভিযান চালিয়ে মাদক বিক্রির ২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, মাদকদ্রব্য ও অস্ত্রসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।  গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলো— মো. ইসহাক আহমেদ (৩৮), মো. চুম্মন (২৫), মো. রবিউল ইসলাম (৩০), মো. রায়হান (১৮), মো. শহিদুল ইসলাম বিজয় (১৮), মো. ইমরান সাইদ (৪২), মো. রাসেল (২২), মো. ইমরান (৩২), মো. শাহাদাত (২০) এবং মো. নয়ন (২৩)।”

অর্থাৎ, এই ভিডিওটির সাথে হাসনাত আবদুল্লাহর বাড়ি থেকে সাত বস্তা টাকা উদ্ধারের কোনো সম্পর্ক নেই।

ভিডিও যাচাই ৩

ভিডিওর পরবর্তী অংশে থাকা ফুটেজটির রিভার্স সার্চ করে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম যমুনা টিভির ইউটিউব চ্যানেলে গত ১ জুলাই “আবু সাঈদের কবর জিয়ারত শেষে যে বার্তা দিলেন নাহিদ ইসলাম” শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত অংশের ভিডিওর প্রচারিত ভিডিওর সঙ্গতি খুঁজে পাওয়া যায়।  

Comparison: Rumor Scanner

জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, “জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে গত ১ জুলাই জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ শুরু হয়। রংপুরের পীরগঞ্জের বাবনপুর জাফরপাড়া গ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে এই কর্মসূচি শুরু হয়।  

অর্থাৎ, ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়। 

ভিডিও যাচাই ৪

ভিডিওর পরবর্তী অংশে থাকা ফুটেজটির রিভার্স সার্চ করে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি “নতুন দল এনসিপির আত্মপ্রকাশ মঞ্চে যা বললেন আহ্বায়ক” শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত অংশটি ওই ঘটনার দৃশ্য । 

Comparison: Rumor Scanner

একইদিনে প্রথম আলোর ওয়েবসাইট প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি এনসিপির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে নাহিদ ইসলাম জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-জনতা, শহীদ পরিবারের সদস্য ও রাজনৈতিক দলের নেতাদের সংগ্রামী সালাম ও শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘আমরা সামনের কথা বলতে চাই। পেছনের ইতিহাস অতিক্রম করে সম্ভাবনার বাংলাদেশের কথা বলতে চাই।’

অর্থাৎ, এটি সাম্প্রতিক সময়ে হাসনাত আবদুল্লাহ সম্পর্কিত কোনো ঘটনার নয়। 

ভিডিও যাচাই ৫

ভিডিওর পরবর্তী অংশে থাকা ফুটেজটির রিভার্স সার্চ করে কালবেলার ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৪ মার্চ “নিজ জেলায় শতাধিক গাড়ি নিয়ে শো-ডাউন সারজিসের” শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওর সাদৃশ্য রয়েছে।  

Comparison: Rumor Scanner

প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ২৪ মার্চ জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম বাড়ি ফেরার পথে ঢাকা থেকে সৈয়দপুর পর্যন্ত গিয়েছেন উড়োজাহাজে চড়ে। বাকি ১০০ কিলোমিটার পথের মধ্যে অর্ধেকটা পাড়ি দিয়েছেন শতাধিক গাড়ির বহর নিয়ে। 

অর্থাৎ, এটি সাম্প্রতিক সময়ের ভিডিও নয়।

এছাড়াও আলোচিত ভিডিওটিতে আরও বেশ কিছু অপ্রাসঙ্গিক ফুটেজ যুক্ত করা হয়েছে। 

হাসনাত আবদুল্লাহর মতো ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হলে কিংবা তার বাসা থেকে সাত বস্তা টাকা উদ্ধার করা হলে এ বিষয়ে গণমাধ্যমগুলো ঢালাওভাবে সংবাদ প্রচার করতো। তবে এ বিষয়ে গণমাধ্যম কিংবা বিশ্বস্ত সূত্রে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

উল্লেখ্য, হাসনাত আবদুল্লাহর ভেরিফাইড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ১৬ সেপ্টেম্বরও তাকে পোস্ট করতে দেখা যায়। 

সুতরাং, হাসনাত আবদুল্লাহর বাড়ি থেকে সাত বস্তা টাকা উদ্ধার ও তাকে গ্রেফতারের দাবিটি সম্পূর্ণ ভুয়া ও বানোয়াট। 

তথ্যসূত্র 

আরও পড়ুন

spot_img