সম্প্রতি, হত্যা মামলায় কারাগারে থাকা সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এর নির্দেশে মুক্তি পেয়ে গর্জে উঠেছেন শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ইউটিউবে ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় ১১ লক্ষাধিক বার
উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত টিকটকে ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় ৯ লক্ষ ৫০ হাজারের অধিক বার।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এর নির্দেশে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন মুক্তি পেয়েছেন শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয়। বরং, সেনাপ্রধানের গত ২৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় শহীদ সেনা দিবস উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের দেওয়া বক্তব্যের ফুটেজ এবং ব্যারিস্টার সুমনের পুরোনো ভিন্ন ঘটনার ভিডিও প্রচার করে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এতে ব্যারিস্টার সুমন আটক ইস্যুতে ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ে কথা বলা হলেও, এতে সেনাপ্রধানের নির্দেশে ব্যারিস্টার সুমন মুক্তি পেয়েছেন এমন কোনো তথ্যের কথা বলা হয়নি।
ভিডিওটিতে সেনাপ্রধানের ফুটেজটিতে সেনাপ্রধানকে বলতে শোনা যায়, ‘বিকজ অফ ডিসিপ্লিন তারপরেও আমি আমার অফিসারকে আদেশ দিয়েছি, একশন নেওয়া হয়েছে অপরাধী কিনা যদি সামান্য কোন সন্দেহের অবকাশ থাকে সেটা তাদের ফেভারে যাবে’
সেনাপ্রধানের ভিডিও ফুটেজটির বিষয়ে অনুসন্ধানে এটিএন বাংলা নিউজ এর ইউটিউব চ্যানেল ‘ATN Bangla News’ -এ গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ‘সেনা প্রধানের খুবই গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য, সেনাবাহিনীকে সাহায্য করেন, আক্রমণ করবেন না: সেনাপ্রধান |’ শীর্ষক ক্যাপশনে প্রচারিত ভিডিওতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফুটেজের সাদৃশ্যপূর্ণ ফুটেজ খুঁজে পাওয়া যায়।

সেনাপ্রধানকে ফুটেজের এই জায়গায় বলতে শোনা যায়, বিকজ অফ ডিসিপ্লিন তারপরেও আমি আমার অফিসারকে আদেশ দিয়েছি যদি সামান্যতম কোন সন্দেহের অবকাশ থাকে কোন কারো বিরুদ্ধে যেই অ্যাকশন নেওয়া হয়েছে অপরাধী কিনা যদি সামান্য কোন সন্দেহের অবকাশ থাকে সেটা তাদের ফেভারে যাবে।
এখানে, ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানা হত্যার ঘটনায় শাস্তিপ্রাপ্তদের অনেকে নিজেদের নিরপরাধ দাবি প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান মন্তব্য করেন।
ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বর্তমান আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির জন্য পরস্পর হানাহানি ও বিদ্বেষপূর্ণ আচরণকে দায়ী করেন। তিনি ২০০৯ সালের ২৫শে ফেব্রুয়ারির পিলখানার ঘটনার সুষ্ঠু বিচার প্রক্রিয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তিনি এই লক্ষ্যে সরকার ও ডক্টর ইউনুসের প্রচেষ্টার কথা জানান। সেনাবাহিনীকে সাহায্য ও সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়ে তিনি তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ না করার অনুরোধ করেন। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে দেশকে একটি সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ স্থানে পরিণত করার ওপর গুরুত্ব দেন, যেখানে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিরাপদে বসবাস করতে পারবে।
উক্ত বিষয়ে প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর রাওয়া ক্লাবে অনুষ্ঠিত পিলখানা হত্যাকাণ্ডের শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের স্মরণ অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ২০০৯ সালের পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার প্রক্রিয়া এবং দেশের বর্তমান আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
এছাড়া, ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন মুক্তি পেয়েছেন কিনা জানতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে দাবির সপক্ষে গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্য প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, সেনাপ্রধানের গত ২৫ ফেব্রয়ারির এক অনুষ্ঠানের ভিডিও ফুটেজ ও ব্যারিস্টার সুমনের পুরোনো ভিন্ন ঘটনার ভিডিও দেখিয়ে সেনাপ্রধানের নির্দেশে ব্যারিস্টার সুমন মুক্তি পেয়েছেন দাবিটি প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।