ভারত-শাসিত কাশ্মীরে গত ২২ এপ্রিল সশস্ত্র গোষ্ঠীর ভয়াবহ হামলাকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চরম পর্যায়ে রয়েছে। এরই মধ্যে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম থেকে জানা যায়, ফিরোজপুর সেক্টর দিয়ে ভুলবশত পাকিস্তানের ভূখণ্ডে প্রবেশ করায় এক বিএসএফ সদস্যকে আটক করেছে পাকিস্তান।
এরই প্রেক্ষিতে, বিএসএফ সদস্য আটককে ঘিরে সংঘর্ষে ৮৫ জনের প্রাণহানি দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
অন্য একটি পোস্টে দাবি করা হয়, সীমান্তে সংঘর্ষে নিহত ৮৫।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, পাকিস্তান কর্তৃক বিএসএফ সদস্য আটককে ঘিরে ৮৫ জনের প্রাণহানির দাবিটি সঠিক নয়। বরং, কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই এই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। তাছাড়া, নিয়ন্ত্রণরেখার (এলওসি) বিভিন্ন পয়েন্টে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে গোলাগুলির খবর পাওয়া গেলেও নিহত হওয়ার কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফেসবুকের উক্ত দাবির কতিপয় পোস্টটিতে একটি ব্লগপোস্টের লিংক সূত্র হিসেবে দেওয়া হয়েছে। লিংকটিতে প্রবেশ করে ‘কাশ্মীরে ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষে ৮৫ জন নিহত, পরিস্থিতি উত্তপ্ত’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন দেখা যায়। প্রতিবেদনটি প্রকাশের তারিখ হিসেবে ‘২ এপ্রিল ২০২৫’ উল্লেখ রয়েছে।
কথিত প্রতিবেদনটিতে দাবি করা হয়, কাশ্মীর সীমান্তে ফের রক্তাক্ত সংঘর্ষে উত্তাল ভারত ও পাকিস্তান। আজ ভোর থেকে শুরু হওয়া গোলাগুলিতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৮৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। নিহতদের মধ্যে উভয় পক্ষের সামরিক সদস্য ছাড়াও রয়েছেন সাধারণ বেসামরিক নাগরিক।
রিউমর স্ক্যানারের বিশ্লেষণে কথিত এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা ‘sadhinnews247’ নামের ব্লগস্পটের বিনামূল্যের ডোমেইনের এই সাইটটি একটি ভূঁইফোড় সাইট বলে প্রতীয়মান হয়।
জম্মু ও কাশ্মীর একটি স্পর্শকাতর এলাকা এবং নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর প্রায়শই ছোটখাটো উত্তেজনা ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে থাকে। তবে সম্প্রতি, কাশ্মীরের কুপওয়াড়া ও রাজৌরি সীমান্ত অঞ্চলে কোনো বড় আকারের বা তাৎক্ষণিক সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়নি।
এছাড়া, দাবির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে সম্প্রতি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সীমান্তে বড় আকারের সংঘর্ষে বা গোলাগুলির ঘটনায় ৮৫ জন নিহতের কোনো তথ্য গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে, আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স, ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট এবং দ্য গার্ডিয়ান এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিদ্যমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে ভারত-পাকিস্তান দুই দেশকেই জাতিসংঘ ‘সর্বোচ্চ সংযম’ দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে। এর মধ্যেই ভারত ও পাকিস্তানের বাহিনী কাশ্মীরের বিভক্তকারী নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর বিভিন্ন স্থানে বরাবর গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে।
তবে, উক্ত প্রতিবেদনগুলোতে নিহতে কোনো তথ্য উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, পাকিস্তান কর্তৃক বিএসএফ সদস্য আটককে কেন্দ্র করে কিংবা কাশ্মীরে ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষে ৮৫ জন নিহত হওয়ার দাবিটি মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Hindustan Times: BSF jawan held in Pakistan after crossing border
- Reuters: India, Pakistan exchange gunfire for 2nd day as ties plummet after attack
- The Independent: Shots fired between India and Pakistan border guards for second day running as tensions soar
- The Guardian: Pakistan and India exchange fire as UN calls for ‘maximum restraint’