ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনি নবদম্পতি মৃত্যুর ঘটনায় ভিন্ন দম্পতির ছবি প্রচার

গত বছরের (২০২৩) সালের ০৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামক হামলা শুরু করে এবং উক্ত হামলাকে কেন্দ্র করে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত শুরু হয়, যা এখনো চলমান। এই সংঘাতের মধ্যেই গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ইসরায়েলি বাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ফিলিস্তিনের নবদম্পতি আবদুল্লাহ আবু নাহেল এবং মারিয়াম আল-দিব মার যান। এই দম্পতির ছবি দাবিতে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফিলিস্তিনি

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু ছবি দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ইন্টারনেটে প্রচারিত ছবিগুলো ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতে বিয়ের তিন দিন পর মারা যাওয়া আবদুল্লাহ আবু নাহেল এবং মারিয়াম আল-দিবের না বরং ছবিগুলো মাহমুদ এবং শাইমা খাজিক দম্পতির।

ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে কাতার ভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরার ওয়েবসাইটে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি “We will celebrate amidst destruction’: Young couple marries in Gaza camp” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবির মিল পাওয়া যায়।

Image Collage: Rumor Scanner

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এটি গত ১৬ ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত মাহমুদ ও শাইমা খাজিক দম্পতির বিয়ের ছবি। 
প্রতিবেদনটি থেকে মাহমুদ এবং শাইমা খাজিক দম্পতি সম্পর্কে জানা যায়, গত অক্টোবরে শুরু হওয়া গাজায় ইসরায়েলি হামলার থেকে বাঁচতে মাহমুদ এবং শাইমা খাজিক দুররা স্টেডিয়ামে আশ্রয় নেয়। আট মাসেরও বেশি সময় আগে তারা বিয়ে করার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু গত অক্টোবরে শুরু হওয়া গাজা- ইসরায়েলের সংঘাতের কারণে তাদের বিয়ে স্থগিত হয়ে যায়। গাজা শহরের শুজাইয়া পাড়া থেকে পালিয়ে আসার পর দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে এই দম্পতি তাদের পরিবারসহ দেইর এল-বালাহতের একটি অস্থায়ী শিবিরে বাস করেছিল।

পরবর্তীতে তুরস্ক ভিত্তিক সংবাদ সংস্থা আনাদোলু এজেন্সির ওয়েবসাইটে গত ২০ ফেব্রুয়ারি “Newly married Palestinian couple alive contrary to reports on their death: Anadolu reporter” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দক্ষিণ গাজা উপত্যকার রাফাতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় মাহমুদ এবং শাইমা খাজিক দম্পতি মারা গিয়েছেন দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি তথ্য প্রকাশিত হয়। তবে তারা এখনো বেঁচে আছেন। বিষয়টি মাহমুদের দেওয়া এক সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে গণমাধ্যমটি নিশ্চিত করেছে।

মাহমুদ আনাদলু এজেন্সিকে জানায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত মৃত্যুর সংবাদটি রাফাহ শহরের আবু নাহলের পরিবার থেকে ভিন্ন এক নবদম্পতির।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি ‘Warfare Analysis’ নামের একটি এক্স অ্যাকাউন্টে মাহমুদ এবং শাইমা খাজিক দম্পতির একটি ভিডিও বার্তা পাওয়া যায়। ভিডিওতে দম্পতিটি নিজেদের সুস্থতার কথা জানান এবং দোয়া প্রার্থনা করেন।

মূলত, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি চলমান ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতে ইসরায়েলি বাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ফিলিস্তিনের নবদম্পতি আবদুল্লাহ আবু নাহেল এবং মারিয়াম আল-দিব মারা যান। তবে এই দম্পতির মারা যাওয়ার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফিলিস্তিনের মাহমুদ এবং শাইমা খাজিক নামের ভিন্ন এক দম্পতির ছবি প্রচার করা হয়েছে। প্রচারিত ছবির এই দম্পতি এখনো জীবিত আছেন।

সুতরাং, ইসরায়েলি বাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ফিলিস্তিনের নবদম্পতি মারা যাওয়ার ঘটনায় ভিন্ন দম্পতির ছবি প্রচার করা হয়েছে, যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img